নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ ইউনিট আগেই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এবার মাওবাদী আন্দোলনের সর্বশেষ গড় দণ্ডকারণ্যের একাংশেও ধস নামল সংগঠনে। সর্বশেষ ধাক্কা স্বয়ং মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে সোনুর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত! বাংলায় একসময় ত্রাস হয়ে ওঠা মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজির ছোটোভাই তিনি। স্ত্রী তথা মাওবাদী নেত্রী তারাক্কা ইতিমধ্যেই অস্ত্র ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরেছেন। সেই পর্বেই অস্ত্রসংবরণের পক্ষে পার্টির পলিটব্যুরো এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছিলেন সোনু। তা নিয়ে ৬৯ বছর বয়সি এই শীর্ষ নেতার সঙ্গে তেলেঙ্গানা ইউনিটের প্রবল দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে সম্প্রতি। মাওবাদী সেন্ট্রাল কমিটি এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটি সম্প্রতি পালটা বিবৃতি জারি করে বলে, ‘বেণুগোপাল বিশ্বাসঘাতক এবং সংশোধনবাদী। বুর্জোয়া, পুঁজিবাদী শক্তির দালাল হয়ে গিয়েছে।’ তার জেরে মাওবাদী সঙ্গত্যাগের ঘোষণাও করেন সোনু। মঙ্গলবার ভোররাতে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলি জেলা পুলিস সদরদপ্তরে ৬০-৬২ জন অনুগামীকে নিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। ফলে এই মুহূর্তে থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজি এবং মাধবী হিদমা ওরফে সন্তোষ ছাড়া মাওবাদীদের আর কোনও বড় মাপের নেতা রইল না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত কয়েকমাস ধরে বারবার একটি নজিরবিহীন ঘোষণা করছেন—২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যেই মাওবাদী সন্ত্রাসের সমাপ্তি ঘটবে। তারপর থেকেই মাওবাদীদের সংগঠন ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এদিনের ঘটনাও তার প্রমাণ। তেলেঙ্গানার পেড্ডাপল্লি কলেজ থেকে কমার্সে স্নাতক হওয়ার পর সশস্ত্র বিপ্লবের পথে পা বাড়িয়েছিলেন সোনু। উত্তর দণ্ডকারণ্য এবং গড়চিরৌলির দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। শহুরে বুদ্ধিজীবী, সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি আত্মসমর্পণ করায় মাওবাদী নেটওয়ার্ক একপ্রকার পঙ্গু হয়ে গেল। তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটির সঙ্গে তাঁর বিরোধ কার্যত দলকে আড়াআড়ি বিভাজিত করেছে। কিন্তু ক্রমেই বেণুগোপালের অভিমতের দিকেই পাল্লা ভারী হচ্ছে। আর তাই এই পর্বকে মাওবাদী সন্ত্রাসের শেষের শুরু বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী।