বিপর্যয়ের পর গন্ডারদের ঘরে ফিরিয়ে পুরস্কৃত হচ্ছে মীনাক্ষী, বলরাম, শম্ভুরা
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
ব্রতীন দাস জলপাইগুড়ি
বিপর্যয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার থেকে প্লাবনে ভেসে যাওয়া গন্ডারদের ঘরে ফিরিয়ে পুরস্কৃত হচ্ছে মীনাক্ষী, বলরাম ও শম্ভুরা। চরম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কর্তব্যে অবিচল থাকায় ওদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। মীনাক্ষী, বলরাম, শম্ভু কিংবা মেনকা প্রত্যেকেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কুনকি। তারা যেভাবে নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে পর্যটকদের রক্ষা থেকে বন্যপ্রাণ উদ্ধারে সাহায্য করেছে, তাতে অভিভূত বনকর্তারা।
একারণে তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন জলদাপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান। তিনি বলেন, বিপর্যয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার থেকে দুর্যোগের জেরে এলাকাছাড়া হয়ে যাওয়া গন্ডারদের জঙ্গলে ফেরানো, সবেতেই আমাদের কুনকি হাতিরা দারুণ সহযোগিতা করেছে। ওদের সাহায্য ছাড়া রেসকিউ অপারেশন কোনওমতে সম্ভব হতো না। সেকারণে আমরা আট-দশটি কুনকিকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কুনকির পাশাপাশি গন্ডার উদ্ধার অভিযানে শামিল বনকর্মীদেরও সংবর্ধিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বনদপ্তরের।
ঠিক কী পুরস্কার দেওয়া হবে কুনকি হাতিদের? বনদপ্তর সূত্রে খবর, ওদের প্রত্যেকের নামে ‘সার্ভিস বুক’ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পুরস্কার হিসেবে চাকরির-খাতায় বাড়তি সুযোগ সুবিধা যোগ হতে পারে। বাড়তে পারে সবেতন ছুটি। কারও ক্ষেত্রে ‘বেতন’ কিংবা অবসরকালীন ‘ভাতা’ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকতে পারে। এছাড়া ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া তো আছেই।
পুরস্কারের তালিকায় এখনও পর্যন্ত জলদাপাড়ার আটটি কুনকির নাম উঠেছে। তারা হল সুন্দরমণি, নারজুন্ডা, অম্বা, মেনকা, ডায়না, বলরাম, মীক্ষাক্ষী ও শম্ভু। এদের কেউ জলের তোড়ে হলং নদীর সেতু ভেঙে যাওয়ায় জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করেছে। অনেকে আবার জলদাপাড়া থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার জঙ্গলে গন্ডার উদ্ধার অভিযানে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। কয়েকটি কুনকি আবার দুর্যোগের পর থেকে লাগাতার বনকর্মীদের পিঠে নিয়ে জঙ্গল স্ক্যানিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গভীর জঙ্গলে কোথাও কোনও বন্যপ্রাণী বিপন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে।
ডিএফও বলেন, দুর্যোগে নিজের জীবন বাজি রেখে যাঁরা মানুষ ও বন্যপ্রাণকে রক্ষা করেছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরস্কৃত আট যোদ্ধার মধ্যে আমাদের বনদপ্তরের কর্মী নূর মহম্মদ আলি রয়েছেন। এটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের। বিপদের দিনে আমাদের কুনকি হাতিরাও নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে কর্তব্যে অটুট থেকেছে এবং নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সেকারণে প্রতীকী হলেও তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভুটানের জলে ডুয়ার্সে মানুষের পাশাপাশি বিপন্ন হয়ে পড়ে বন্যপ্রাণীরাও। তোর্সার জলের তোড়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে একের পর এক ভেসে যায় গন্ডার। তাদের মধ্যে কিছু আলিপুরদুয়ারে, কিছু কোচবিহারে আশ্রয় নেয়। ওইসব গন্ডার ফেরাতে কালঘাম ছোটে বনদপ্তরের। এক্ষেত্রে কুনকি হাতিরা বিশেষভাবে সাহায্য করে বনদপ্তরকে। তাদের সাহায্য নিয়েই এখনও পর্যন্ত আটটি গন্ডারকে জলদাপাড়ায় ফেরানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএফও। এরমধ্যে কোচবিহারে আশ্রয় নেওয়া একটি গন্ডারকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে ফেরানো হয়েছে। মাদারিহাটে পর্যটকদের উদ্ধার করছে কুনকি হাতি।-ফাইল চিত্র