• ভূতনির ভাঙন রুখতে আইআইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: মালদহের ভূতনির ভাঙন রুখতে এবার আইআইটির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য। ইতিমধ্যে উত্তরাখণ্ডের রুরকি আইআইটি’র বিশেষজ্ঞরা এসে ভূতনির ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর সহ সেচদপ্তরের কর্তারা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও ফি বছর গঙ্গা, ফুলহার ও কোশী নদীর ছোবলে তা ভেঙে যাচ্ছে। এবারও বর্ষায় ফুলহার নদীর জলের তোড়ে দক্ষিণ চণ্ডীপুরে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ভূতনির বহু গ্রাম। ঘর ছাড়তে হয় হাজার হাজার মানুষকে। এছাড়া ভাঙন তো রয়েইছে। নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে জমিবাড়ি। এর স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতেই আইআইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের কর্তারা।

    সেচদপ্তরের মালদহের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ঠিক কোন পথে এগলে ভূতনির সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে, সেটা জানতে রুরকি আইআইটির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি। গত ৫ অক্টোবর অধ্যাপক জেড আহমেদের নেতৃত্বে সেখানকার বিশেষজ্ঞরা মালদহে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কল্যাণীতে অবস্থিত রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর সহ দপ্তরের কর্তারা। তাঁদের ভূতনির ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। 

    পরিদর্শনের পর আইআইটি’র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সেচদপ্তরের কর্তাদের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। বাকিটা রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে, ভূতনির ভাঙন ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা ঠিক কী প্রস্তাব দিচ্ছেন। তার আগে স্যাটেলাইট ইমেজ খতিয়ে দেখছে সেচদপ্তর।

    মালদহের ভূতনির চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নতুন নয়। বারবার বাঁধ দেওয়া হলেও বর্ষায় ভেঙে কিংবা উপচে দুর্ভোগে পড়তে হয় লক্ষাধিক বাসিন্দাকে। গঙ্গা, ফুলহার ও কোশী চারদিক থেকে কার্যত ঘিরে ধরেছে ভূতনিকে। বেশকিছু জায়গায় নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় সঙ্কট আরও বেড়েছে। 

    সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে কয়েকমাস আগেই ভূতনিতে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচে বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু গত ১৩ আগস্ট সকালে সেই বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে সংরক্ষিত এলাকায়। উত্তর চণ্ডীপুর, দক্ষিণ চণ্ডীপুর, হীরানন্দপুর সহ স্থানীয় তিনটি পঞ্চায়েতের অন্তত ১২-১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। এরপরই বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সরব হন ভূতনির বাসিন্দারা। দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। এনিয়ে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। সম্প্রতি সেচদপ্তরের মালদহের একাধিক আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেচদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিককে। ভূতনির ভাঙন ঠেকানোই তাঁর কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

    কৃষ্ণেন্দু বলেন, গতবছরও দক্ষিণ চণ্ডীপুরে বাঁধ ভেঙেছিল। এরপর শুখা মরশুমে কাটাবাঁধের জায়গায় নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এবারের বর্ষায় সেই বাঁধের নীচ নিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। 

    জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। বাঁধ ভেঙে ভূতনির বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েন।

    তাঁর দাবি, শুধু ভূতনিতে জল ঢোকা ঠেকানোর জন্য নয়, নদীর আগ্রাসন বন্ধেও বেশকিছু জায়গায় বাঁধ, স্পার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইআইটি’র বিশেষজ্ঞরা। ফাইনাল রিপোর্ট পেলে ডিপিআর তৈরির কাজে হাত দেব। আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)