• ভুটানের বোল্ডারে ভরেছে ডুয়ার্সের নদীখাত, জনপদের উপর দিয়ে বইছে যোগীখোলা, খারখোলা
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বিপর্যয়ে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলাতেই ১২০টি জায়গায় বিভিন্ন নদীর বাঁধ ভেঙেছে। ময়নাগুড়ির আমগুড়ি এলাকায় জলঢাকা নদীতে বাঁধ ভেঙেছে ৫টি জায়গায়। এছাড়াও ধূপগুড়িতে গধেয়ারকুঠি এলাকায় জলঢাকা নদীর উপর একাধিক বাঁধ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। কোচবিহারের মাথাভাঙায় গিলাইডাঙাতেও নদীবাঁধ ভেঙেছে। নাগরাকাটায় টানাটানি সেতু ভেঙে পড়ার পাশাপাশি উড়ে গিয়েছে দু’টি গাইড বাঁধ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিধ্বস্ত উত্তরের চার জেলা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে সেচদপ্তরের চারজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করছেন। বেশকিছু জায়গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতি ও নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। 

    জলপাইগুড়িতে সেচদপ্তরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, জলঢাকা, ডায়না সহ একাধিক নদীর বাঁধ ভেঙেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছি। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি জেলায় ১২০টি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। কিছু জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা টেকনিক্যালি চ্যালেঞ্জিং। ভারী মেশিনপত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা অবশ্য ডাইভারশন করে যোগাযোগের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছি। নাগরাকাটায় ডায়না নদীর উপর ক্ষতিগ্রস্ত টানাটানি সেতুর কাছে দু’টি গাইড বাঁধ উড়ে গিয়েছে। ওই বাঁধ দু’টি তৈরি করবে সেচদপ্তর। 

    এদিকে, ভুটানের বোল্ডারে ভরেছে ডুয়ার্সের নদীখাত। যোগীখোলা, খারখোলা, গাবুরজোত সহ একাধিক নদী জয়গাঁতে কার্যত জনপদের উপর দিয়ে বইছে। অন্যদিকে, চামুর্চিতে জনপদের সমান্তরালে বইছে ডায়না, রেতি, সুকৃতি। ফলে আগামী বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলে ফের ডুয়ার্সে ঘনিয়ে আসতে পারে ঘোর বিপর্যয়। এমনটাই আশঙ্কা সেচদপ্তরের কর্তাদের। ভুটান পাহাড়ে কতটা বৃষ্টি হচ্ছে, তা জানতে বর্তমানে মাত্র চারটি রেইন গেজ রয়েছে। জলঢাকা ও তোর্সা নদীর উপর একটি করে এবং সঙ্কোশ নদীর উপর দু’টি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ভুটানকে ৫২টি রেইন গেজ বসানোর জন্য অনেক আগেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনও হয়নি। সোমবারই ভুটানের জল নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলের সঙ্গে ভুটান থেকে যেভাবে ডলোমাইট চলে আসছে, তা নিয়েও রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

    রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ভুটান পাহাড় থেকে ডুয়ার্সে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭২টি নদী নেমে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে আমরা ইন্দো-ভুটান নদী কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছি। মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখছেন। মুখ্যসচিব চিঠি লিখছেন। অথচ কেন্দ্রের কোনও হেলদোল নেই। তাঁর অভিযোগ, ভুটান পাহাড়ে নদীগুলির ক্যাচমেন্টে পর্যাপ্ত রেইন গেজ নেই। এখন মাত্র চার-পাঁচটি রেইন গেজ রয়েছে। অথচ দরকার ৫২টি। আমরা বারবার বলেছি। তারপরও ভুটান রেইন গেজ বসায়নি। পর্যাপ্ত রেইন গেজ থাকলে আমরা সময়মতো জানতে পারতাম ভুটান পাহাড়ে কেমন বৃষ্টি হচ্ছে। সেইমতো আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করতে পারতাম।  আমডাঙায় ভেঙেছে জলঢাকা নদীর বাঁধ। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)