উত্তরবঙ্গ মেডিকেল: র্যাগিং কাণ্ডে জড়িতরা থাকতে পারবে না ফেস্টে
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে র্যাগিংয়ে অভিযুক্তরা কলেজ ফেস্ট ‘প্লাজমা-২০২৫’ এ কোনওভাবেই যুক্ত থাকতে পারবে না। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাদের উপর নজরদারি রাখা হবে। মঙ্গলবার কলেজের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষ র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ করল।
ঘটনার সূত্রপাত কলেজ ফেস্ট ‘প্লাজমা-২০২৫’ কে ঘিরে। আগামী ১৮ ও ১৯ অক্টোবর এই ফেস্ট হবে। গত সোমবার কলেজের ডিন ডাঃ অনুপম নাথ গুপ্তার কাছে প্রথমবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ লিখিতভাবে র্যাগিং ও থ্রেট কালচারের অভিযোগ জানান। তাতে প্রথমবর্ষের ছাত্রছাত্রীরা উল্লেখ করেন, রাত ১২টার আগে মেডিক্যালের হস্টেলের ঘরে লাইট বা দরজা বন্ধ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সিনিয়ররা প্রথমবর্ষের পড়ুয়াদের নির্দিষ্ট একটি ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করতে ও সংলাপ বলতে বাধ্য করাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ফেস্টের ডেকরেশনের নাম করে অনেক রাত পর্যন্ত তাঁদের আটকে রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের কাছ থেকে ছাত্রীদের নাম ও ফোন নম্বর চেয়ে নিয়ে নানারকম ভাবে হেনস্তা করছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝে এমন অভিযোগ সামনে আসতেই মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যায়। ডিন অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিষয়টি প্রিন্সিপালকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্সিপাল প্লাজমা কমিটিতে থাকা শিক্ষক চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্লাজমার জন্য বলপূর্বক বা হুমকি দিয়ে কারও কাছ থেকে চাঁদা তোলা যাবে না। আর র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে কলেজ প্রিন্সিপাল ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে পাঠিয়ে দ্রুত বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সেইমতো এদিন বেলা ১২টা থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টা অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক চলে। সেই বৈঠকে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দু’পক্ষকেই ডেকে তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়। অভিযুক্তদের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয় বলে বৈঠক সূত্রে খবর। এদিনের বৈঠকে মূলত তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, দীর্ঘক্ষণ অ্যন্টির র্যাগিং কমিটি বৈঠক করেছে। তারা এখনও তাদের প্রস্তাব পাঠায়নি। তারা যে যে প্রস্তাব দেবে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির অন্যতম সদস্য দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এইড ফোরামের পক্ষে অমিত সরকার বলেন, এদিন প্রায় ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে ডাকা হয়েছিল। অভিযুক্তদের অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মেনে নিয়েছে। এদিনের বৈঠকে প্রস্তাব গ্রহণ হয়েছে, প্লাজমা কমিটিতে যদি কোনও অভিযুক্ত থাকে তাহলে তাকে কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে। কমিটিতে না থাকলেও অভিযুক্ত কেউই প্লাজমাতে কোনওভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না। প্লাজমা করার জন্য কারও কাছ থেকে জোর করে, হুমকি দিয়ে বলপূর্বক চাঁদা তোলা যাবে না। এর পাশাপাশি অভিযুক্তদের উপর নজরদারি রাখা হবে। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তারমধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুতর। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই নজরদারি চলবে। তাতে যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব রাখা হবে।