বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী জোটের বোর্ড, অনাস্থায় অপসারিত ৪ উপসমিতির সঞ্চালক
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দলের হুইপ অগ্রাহ্য করে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূল নেতা পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলেন। মঙ্গলবার অনাস্থা প্রস্তাব এনে পঞ্চায়েতের চারটি উপসমিতির চার সঞ্চালককে অপসারণ করল তৃণমূল। আস্থা ভোট ঘিরে পঞ্চায়েত অফিস কার্যত দুর্গের চেহারা নিয়েছিল। পাঁশকুড়া থানার আইসি সমর দে বিশাল বাহিনী নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে হাজির হন। এদিন বিজেপি, আইএসএফ, কংগ্রেস এবং সিপিআইয়ের নির্বাচিত সদস্যরা কেউ ছিলেন না। তবে, বিরোধীদের সমর্থনে নির্বাচিত প্রধান উপস্থিত ছিলেন। ধ্বনিভোটে পঞ্চায়েতের সাধারণ সভার ২০ সদস্যের মধ্যে ১১জনের সমর্থন ছিল শাসকের পক্ষে। যেকারণে চারজন সঞ্চালক অনাস্থা ভোটে অপসারিত হন।
পুরুষোত্তমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৭টি। ২০২৩ সালে তৃণমূল সাতটি, বিজেপি পাঁচটি, আইএসএফ দু’টি, কংগ্রেস দু’টি, সিপিআই একটি আসনে জয়ী হয়। বোর্ড ত্রিশঙ্কু হওয়ায় তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবির বোর্ড গড়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে কংগ্রেসের দু’জনের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠনের কথাবার্তা প্রায় সেরে রেখেছিল তৃণমূল। কিন্তু, বোর্ড গঠনের সময় মস্ত বড় চমক দেখা যায়। তৃণমূল কংগ্রেসেরই তিনজন সদস্য বিরোধী জোটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বোর্ড গঠন করে। প্রধান হন তৃণমূলের টিকিটে জয়ী সত্যজিৎ ত্রিপাঠী আর উপপ্রধান হন চন্দনা মহাপাত্র।
মাস তিনেক আগে বিজেপির দুই সদস্যা নিরুপমা সাঁতরা এবং রিঙ্কু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁরা যোগ দিতেই পুরুষোত্তমপুর পঞ্চায়েতের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে তৎপর হয় তৃণমূল। দলছুট তিনজনকে বাগে আনার পরই শাসকদলের পক্ষ থেকে উপসমিতিতে অনাস্থা আনা হয়। মঙ্গলবার তার ভোটাভুটি ছিল। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী সাত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, বিজেপি থেকে আসা দু’জন সদস্য এবং সাধারণ সভার সদস্য হিসেবে পঞ্চায়েত সমিতির দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে, বিরোধীরা এদিনের সভায় আসেননি। তাই ধ্বনিভোটে চারটি উপসমিতির চার সঞ্চালকে অপসারণ করা হয়।
তৃণমূল কংগ্রেসের পুরুষোত্তমপুর অঞ্চল সভাপতি প্রবীর বেরা বলেন, বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের তিনজন বোর্ড গঠন করেছিল। গত তিন মাস আগে দু’জন বিজেপির সদস্যা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের নিয়ে আমরা উপসমিতিতে অনাস্থা এনেছিলাম। চারটি উপসমিতিতে আমরা জয়ী হয়েছি।
বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি সুদীপ মাইতি বলেন, নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু ছিল। এমতাবস্থায় তৃণমূলের তিনজন আমাদের সঙ্গে জোট করে বোর্ড গড়েছিল। আমাদের দু’জন সদস্যা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর, তৃণমূলের তিন বিক্ষুব্ধ সদস্যও এখন দলের চাপে পার্টির নির্দেশ মেনে চলছেন। এরকম অবস্থায় চার উপসমিতিতে অনাস্থা এনে ওরা জয়ী হয়েছে।