নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা ছাত্রীদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছে। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। হস্টেলের নিয়মকানুন আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা মেনে চলছেন কি না, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তায় কোনও খামতি রয়েছে কি না, তাও মেডিকেল কলেজের কর্তারা খতিয়ে দেখবেন। উল্লেখ্য, এর আগে বাঁকুড়া মেডিকেলের হস্টেলে বহিরাগত যুবকদের ঢুকে পড়ার মতো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল। কয়েকবছর আগে লোকপুর ক্যাম্পাসে থাকা নার্সিং হস্টেলে নেশাগ্রস্ত যুবকদের ঢুকে পড়ার প্রতিবাদে পড়ুয়ারা রাস্তা অবরোধও করেছিলেন। তাঁরা হস্টেলের সামনে অবস্থান বিক্ষোভও করেন। পরে ডাক্তারি পড়ুয়াদের হস্টেলেও একাধিকবার বহিরাগত ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটে। ওইসব ঘটনায় হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর জি কর কাণ্ডের পর হস্টেল ও কলেজের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। ফের দুর্গাপুর কাণ্ডের জেরে ছাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে বৈঠক হতে চলেছে।
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অর্পণকুমার গোস্বামী বলেন, বর্তমানে ছাত্রদের জন্য পাঁচটি ও ছাত্রীদের জন্য দু’টি হস্টেল রয়েছে। হস্টেলে ৪০০ ছাত্রী থাকেন। সকলে নিয়ম মেনে চলছেন কি না, তা আমরা কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে খতিয়ে দেখব। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকদের নিয়েও আমরা বৈঠক করব। বৃহস্পতিবার জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের তরফে মেডিকেলে একটি বিশেষ কর্মশালা করা হবে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ব্যাপারে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ওই কর্মশালায় ছাত্রীদের পাশাপাশি মহিলা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও অংশ নেবেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজে স্নাতক স্তরে ১০০০ জন, ইন্টার্ন ২০০ জন, হাউস স্টাফ ৭০ জন ও স্নাতকোত্তর স্তরে পিজিটি এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট মিলিয়ে প্রায় ৩২০ জন রয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়ার সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অথচ বর্তমানে হস্টেলে মাত্র ৮০০ জনের থাকার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। ফলে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তার ফলে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয়ের পাশাপাশি নানা ঝক্কিও পড়ুয়াদের পোহাতে হচ্ছে। কলেজে যাতায়াতের সময়ে ছাত্রীদের সুরক্ষা নিয়েও অভিভাবকরা উদ্বেগে থাকছেন।
এক অধ্যাপক বলেন, ১৯৬১ সালে আমরা সরকারি মেডিকেল কলেজের স্বীকৃতি পাই। প্রথমে এমবিবিএসে মাত্র ৫০টি আসন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্নাতকস্তরে ওই আসন সংখ্যার নিরিখেই ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছিল। তাতে তেমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা দ্রুত হারে বেড়ে ২০০টি হয়েছে। আগে বাঁকুড়া মেডিকেলে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে কেউ ছিল না। বর্তমানে ওই পদেও পড়ুয়া রয়েছে। আসন তথা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও হস্টেলের পরিকাঠামো বাড়েনি। তার ফলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও তৈরি হচ্ছে।