• বড়সড় ভাঙন নদীয়া দক্ষিণ বিজেপিতে! দলবল নিয়ে তূণমূলে গেরুয়া নেতা নির্মল
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: বিধানসভা ভোটের আগে পদ্মগড়ে বড়সড় ধস নামল। অপমানিত হয়ে দল ছাড়লেন হাঁসখালি ব্লকের বিজেপির অন্যতম পথিকৃৎ নির্মল ঘোষ। একদা এই রাজ্য নেতার হাত ধরেই হাঁসখালি ব্লকে পদ্ম ফুটলেও আজ দলের মধ্যেই তৈরি হওয়া নয়া লবির কাছে অপমানিত তিনি। তাই কয়েকশো বিজেপি কর্মী সমর্থক নিয়ে নির্মলবাবু যোগ দিলেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে। সোমবার সন্ধ্যায় হাঁসখালি ব্লকে তৃণমূলের একটি বিজয়া সম্মিলনিতে পদ্ম ছেড়ে পাকাপাকিভাবে ঘাসফুলে নাম লেখান তিনি। 

    ব্লকের রাজনীতিতে তিনি নিঃসন্দেহেই আড়াই চালের ‘ঘোড়া’। আর তাই একসময় তাঁর হাত ধরেই ঢালাও পদ্ম ফুটেছিল হাঁসখালি ব্লকে। ২০১৪ সালে ছিলেন হাসখালি ব্লক বিজেপির সম্পাদক। তাঁর দুর্দান্ত ‹পারফরমেন্স› দেখে পরের বছর রাজ্য বিজেপির কিষাণ মোর্চার কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়। যদিও নির্মলবাবুর অবর্তমানে ফের হাঁসখালি ব্লকে বিজেপি টলমল করতে শুরু করলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় ২০১৬ সালে। করা হয় ব্লক সভাপতি। এরপর থেকে বিজেপিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই ব্লক অন্যতম গড় হয়ে ওঠে বিজেপির। খোদ গেরুয়া শিবিরের কর্মীদের একাংশই বলছেন, নির্মল ঘোষ চলে যাওয়া হাসখালি ব্লকে বিজেপির একটি অঙ্গহানি হওয়ার মতোই ক্ষতিকর। কারণ নির্মল ঘোষ আর হাসখালি ব্লক বিজেপি, একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু তারপরেও কেন দল ছাড়লেন পরিপক্ক এই রাজনীতিক? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তাঁর বউমা শুক্লা হোর ঘোষ। তিনি বলেন, দলের জন্য সবকিছু করার পরেও ক্রমাগত অপমান জুটেছে। দল ছাড়তে বাধ্য করেছে বিজেপির বর্তমান লবি। যারা দলটাকে করে খাওয়ার জায়গা বানিয়েছে। বাবা যেহেতু পুরনো দিনের নেতা, তাই উনি থাকলে ওদের এই ‘খাওয়া’ হচ্ছে না বলে ওঁকে বরাবরই সরানোর চেষ্টা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি বিজেপির হয়ে কঠিন সিটে জেলা পরিষদে লড়েছি। যে কেউ এই ব্লকে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, নির্মল ঘোষকে কত মানুষ ভালোবাসেন। এটা দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছে বর্তমান জেলা কমিটির একাধিক নেতা এবং তাদের নিয়ন্ত্রকরা। বগুলা ২ পঞ্চায়েতটাকে পুরো বিক্রি করে দিয়েছে। প্রসঙ্গটা বিজেপি বা তৃণমূল নয়, একজন মানুষ যখন অপমানিত হবেন, তখন সেই দলে থাকার আর কোনও মানে হতে পারে না। এক সময়ে যেমন এখানে বাবা বিজেপিকে জন্ম দিয়েছেন, তেমন তাদের শেষও করতে পারবেন। আগামী দিনে এখানে তৃণমূল থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, মানুষের জন্য যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের দরজা সবসময় তৃণমূলে খোলা। নির্মলবাবু কতটা গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন নিজের ব্লকে, তা অস্বীকার করতে পারবে না কোনও রাজনৈতিক দল। বিজেপিতে উনি অপমানিত হচ্ছিলেন। আমরা ওঁকে সেই জায়গা করে দেব। হাঁসখালি ব্লকে উনি আমাদের পথ দেখাবেন। 

    এদিকে, নির্মল ঘোষের দলত্যাগ প্রসঙ্গে নদীয়া দক্ষিণ জেলা বিজেপির মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, আমাদের আদর্শ হচ্ছে প্রথমে রাষ্ট্র, তারপর দল, তারপর সবকিছু। কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থকে দলের আগে নিয়ে আসতে চান তাহলে তার কথা দল ভাববে না। আমার সমস্যা হলে আমি দলকে জানাব। দল না শুনলে রাজনীতি করব না। কিন্তু তাই বলে দল ছাড়ব না। আর উনি তো চোরের দলে গিয়েছেন। চোরেদের সঙ্গে মিলে এখন কী করেন সেটাই দেখার। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)