• এগরা হাসপাতালে শিশুমৃত্যু, হোমগার্ডকে বেধড়ক মার! চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক ও সংবাদদাতা, কাঁথি: চিকিৎসার গাফিলতিতে শিশুমৃত্যুর অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে উত্তাল হয়ে উঠল এগরা মহকুমা হাসপাতাল। বেশ ক’দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল দু’মাসের একটি শিশু। তার চিকিৎসা চলছিল হাসপাতালে। এদিন শিশুটির মৃত্যু হয়। বাড়ির লোকজন ও আত্মীয়রা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের সামনে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন। সেইসময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। তখনই এগরা থানার হোমগার্ড সঞ্জিত বাগকে টেনে হিঁচড়ে মারধর করা হয়। মারমুখী লোকজনের হাত থেকে বাঁচতে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পিছু ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলা হয়। বেধড়ক মারধর করা হয়। টানা হ্যাঁচড়া করার সময় উর্দি ছিঁড়ে যায়। সেই অবস্থাতেও কিল, চড়, ঘুসি মারতে থাকেন মৃত শিশুর বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে এগরা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তারপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়। হোমগার্ডের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতরা হলেন, পটাশপুরের বড় উদয়পুরের রাজশেখর মাইতি ও এগরার শিকরা চকদেই গ্রামের শেখ কামরুল হোসেন। মঙ্গলবার তাদের কাঁথি এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। 

    এগরা মহকুমা হাসপাতালের সুপার সমীর আচার্য বলেন, ‘বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে, ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোথাও গাফিলতি থাকলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগরা থানার পুলিশ এনিয়ে তদন্ত করছে।’ এগরা থানার আইসি অরুণকুমার খান বলেন, হাসপাতালে একসঙ্গে অনেকে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। ওই পুলিশকর্মী ও অন্য নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। মারধরের ঘটনা অনভিপ্রেত। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’

    এগরা থানার আলংগিরি গ্রামের বাসিন্দা স্বপন প্রধান।  তাঁর দু’মাসের ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এক সপ্তাহ আগে এগরা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন শিশুর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। পরিবারের লোকজন অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। তার মধ্যেই এদিন সকালে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। এরপরই হাসপাতালে  প্রসূতি বিভাগের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির বাড়ির লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে বাচ্চাটি মারা গিয়েছে। ক্ষোভ বিক্ষোভ চলাকালীন স্থানীয় আরও লোকজন জড়ো হন। এরপরই হাসপাতালে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। সেইসময় কয়েকজন হাসপাতালে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন। এনিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। হাসপাতালের কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের বাধা দিলে ঝামেলা তুঙ্গে ওঠে। 

    স্বপনবাবুর স্ত্রী এদিন বলেন, ‘আমরা ছেলেটিকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভবনাও করেছিলাম। কিন্তু, হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়নি। এদিন আমার সন্তান মারা গেলে কান্নায় ভেঙে পড়ি। সেই সময় কটাক্ষের সুরে এক নিরাপত্তারক্ষীকে বলতে শোনা যায়, একটি বাচ্চা মারা গেলে আর একটি হবে। এত কান্নাকাটির কী রয়েছে?’ তাঁর ওই বক্তব্যে ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা মৃণাল পণ্ডা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এগরা মহকুমা হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষদের আচরণ খুব খারাপ। নানাভাবে রোগীর বাড়ির লোকজনকে হেনস্তা করেন। একটা শিশু মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারকে অত্যন্ত খারাপ মন্তব্য করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার মানও খারাপ।’
  • Link to this news (বর্তমান)