সংবাদদাতা, কাটোয়া: বছরে ৩২ হাজার টাকা বার্ধক্যভাতা দেওয়া হবে! মঙ্গলবার কাটোয়ায় কেপমারের এমন পাতা ফাঁদে পা দিয়ে স্ত্রীকে খুইয়েছিলেন কেতুগ্রামের বৃদ্ধ। শেষে কাটোয়া থানার পুলিশি তৎপরতায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর স্ত্রীকে ফেরত পেলেন। কিন্তু বৃদ্ধার থেকে পাঁচ ভরি সোনা গয়না নিয়ে পালাল দুষ্কৃতী। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে শহরজুড়ে। ওই বৃদ্ধকে নিয়ে তাঁর স্ত্রীকে খুঁজতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি। খতিয়ে দেখা হয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। শেষে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হন ওই বৃদ্ধা।
এসডিপিও বলেন, মোটা টাকা সরকারি ভাতার প্রলোভন দিয়ে কেপমার বৃদ্ধাকে নিয়ে চলে গিয়েছিল। তাঁর গয়না নিয়ে পালিয়েছে ওই দুষ্কৃতী। আর বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ছেড়ে পালিয়ে যায়। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
কেতুগ্রামের বীরহামপুর গ্রামে বাড়ি বছর ছিয়াত্তরের মনোহর সরের। তাঁর চার ছেলে আছে। বড় ছেলে স্কুল শিক্ষক বর্ধমানে থাকেন। আর ছোট ছেলে ইজরায়েলে থাকেন। মেজ ও সেজ ছেলে বীরহাপুরেই থাকেন। মনোহরবাবু তাঁর স্ত্রী রক্ষাময়ীদেবীকে নিয়ে এদিন সকালে বর্ধমানে বড় ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। তাঁরা ডাউন আজিমগঞ্জ ট্রেন ধরে কাটোয়া স্টেশনে নামেন। এরপর ৮টা ৫০মিনিটের বর্ধমান লোকাল ট্রেন ধরবেন বলে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানেই আচমকা এক যুবক তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে। এরপর বৃদ্ধ দম্পতিকে বলে বছরে সরকারি বার্ধক্য ভাতা ৩২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সেজন্য ওই যুবকের সঙ্গে গিয়ে ফর্মে আবেদন করতে হবে। এটা কেপমারের পাতা ফাঁদ বুঝতে পারেননি বৃদ্ধ দম্পতি।
এরপর ওই কেপমার বৃদ্ধ দম্পতিকে স্টেশন থেকে কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসে। বৃদ্ধকে ওখানে বসিয়ে রেখে বৃদ্ধাকে টোটোয় চাপিয়ে ওই কেপমার নিয়ে চলে যায়। দীর্ঘক্ষণ স্ত্রী ফিরছে না দেখে তিনি কাটোয়া থানায় খবর দেন। অভিযোগ পেয়ে এসডিপিও-র নেতৃত্বে পুলিস কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি অভিযানে নামে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু হয়। ওই বৃদ্ধকে নিয়ে এসডিপিও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তল্লাশি চালান। কিন্তল বৃদ্ধাকে পাওয়া যায়নি। এরপর দুপুর ১টা নাগাদ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প থেকে জানানো হয় এক বৃদ্ধা বসে কাঁদছেন। তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হলে বৃদ্ধ বলেন ওই আমার স্ত্রী।
রক্ষাময়ীদেবী বলেন, আমার পাঁচ-ছ’ ভরি সোনার গয়না নিয়ে গিয়েছে ওই দুষ্কৃতী। আমাকে টোটোয় চাপিয়ে শহরের নানা জায়গায় ঘোরায়। এমনকী আমার ছেলেকে ফোন করতে বলে। তারপর বলে আমার গলার সোনার হার, হাতের সোনা বাঁধানো, কানের দুল এসব খুলতে হবে। কারণ আমার ওজন হবে। আমিও তার কথামতো সব খুলে তাকে দিই। সে একটা রুমালে সেসব বেঁধে রাখে। তারপর আমাকে হাসপাতালে ছেড়ে পালিয়ে যায়।
মনোহরবাবু বলেন, স্ত্রীকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছি এটার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। আমার স্ত্রীর হার্টের সমস্যা রয়েছে। সকাল থেকে খুব চিন্তায় ছিলাম। বৃদ্ধের বড় ছেলে জয়দেববাবু বলেন, বাবা-মা কেপমারের পাতা ফাঁদ বুঝতে পারেনি।