• উৎসবের মরশুমে বিদেশ পাড়ির ধুম রাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একদা বিদেশযাত্রা ছিল বাঙালির কাছে স্টেটাস সিম্বল। বিদেশে চাকরি  স্বপ্নের শামিল। বিদেশভ্রমণ মানে জাতে ওঠা। সেই মিথ আজও পুরোপুরি খানখান হয়ে ভেঙে পড়েনি। আজও বিদেশভ্রমণ করে এলে বাড়তি সমীহ আদায় করেন, বাড়তি ঈর্ষার মধ্যেই পড়েন বহু বাঙালি। শুধু কর্পোরেট হাসপাতালের ‘ধনী’ চিকিৎসকদের একটি বড়ো অংশই নয়, এখন বিদেশযাত্রায় মজেছেন সরকারি চিকিৎসক ও শিক্ষক চিকিৎসকদের একাংশ। 

    সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে সম্ভবত এবছরে উৎসবের মরশুম অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে স্বাস্থ্যভবনে। প্রচুর আবেদন মঞ্জুরও হয়েছে। একাংশ যেমন ‘প্রাইভেট ক্যাপাসিটি’তে বিদেশযাত্রা করবেন বলে সরকারকে জানিয়েছেন, আর এক অংশ জানিয়েছেন, তাঁরা ‘এলটিসি’ নিয়েই বিদেশ ঘুরতে যাবেন। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক বা দিনদশেকের জন্য বিদেশ ঘুরে আসতে আগ্রহী সরকারি চিকিৎসক, শিক্ষক চিকিৎসক এবং কিছু ক্ষেত্রে সিনিয়র ও পদাধিকারী নার্সিং কর্মীদের মধ্যে এবার বেশি সংখ্যকের পছন্দের ‘ডেস্টিনেশন’ হল মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। আবার বহু সিনিয়র চিকিৎসকের কাছেই পছন্দের তালিকায় আর এক নাম হল আমেরিকা। কানাডা, ইউরোপ ভ্রমণপিপাসু চিকিৎসকও রয়েছেন তালিকায়। একাংশ ইতিমধ্যেই ঘুরে প্রচুর সুখস্মৃতি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। অনেকের ঘোরার মাঝপথে। কারও কারও কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। উড়ানে বাকি আর কদিন মাত্র! 

    স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, কমপক্ষে মাসখানেক আগে বিদেশযাত্রার আবেদন করতে হয় সরকারের কাছে। আগে টিকিটপত্র কেটে তারপর পোস্ট ফ্যাকটো অনুমোদনের হিড়িক পড়ত। সম্প্রতি অর্থদপ্তরের নির্দেশে কড়াকড়ি লাগু হওয়ায় আবেদন করতে হচ্ছে আগে। এক্ষেত্রে অবশ্য কেন যাচ্ছেন, কোনও সংস্থার স্পনসরশিপে যাচ্ছেন কি না, যিনি যাচ্ছেন, যা খরচ হবে, সেই অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে কি না ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য দাখিল করতে হয় রাজ্যকে। শুধু তাই নয়, কোনও বিদেশি মানুষ বা সংস্থার আতিথেয়তা গ্রহণ করা যাবে না, ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট মানতে হবে—এইসব মুচলেকাও দিতে হবে। সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা থেকে নবান্ন পর্যন্ত অন্তত ১০ জায়গায় সেই ফাইল ঘুরবে। মাঝে যাবে ভিজিলেন্সের কাছেও। তারপর মিলবে অনুমোদন। নিয়মানুযায়ী সরকার নিজের প্রয়োজনে না পাঠালে, কোনও চিকিৎসক প্রতি চারবছরে একবার বিদেশ যেতে পারেন।  দপ্তরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, যতসংখ্যক জায়গায় ফাইল ঘুরতে ঘুরতে যায়, তাতে একমাস আগে আবেদন করলে শেষ মুহূর্তে প্রেশার-সুগার বেড়ে যেতে বাধ্য! কারণ পারমিশন আসতে আসতে ঘোরার দিনও পেরিয়ে যেতে পারে! তাই তারও আগে আবেদন করাই মঙ্গল। এবারে যেমন বিদেশে পাড়ি দেওয়া চিকিৎসকদের একাংশ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, একাংশ জানিয়েছেন তাঁরা ব্যক্তিগত খরচে ঘুরতে যাচ্ছেন। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস যেমন আছে, অনেকেরই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ‘হট ডেস্টিনেশন’ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডও। বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক—বিদেশভ্রমণে ইচ্ছুক, পাড়ি দেওয়ার চিকিৎসকের লম্বা তালিকায় কে নেই? ছিলেন শহরেরই একটি নামকরা মেডিকেল কলেজের এক মেজকর্তাও!  
  • Link to this news (বর্তমান)