নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও আসানসোল: দুর্গাপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই বড়সড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার হাইকোর্টের পূজাবকাশকালীন বেঞ্চের নির্দেশ, অনুমতি ছাড়া কেউই ওই কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের এজলাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেডিকেল কলেজের তরফে বলা হয়, পরীক্ষা চলছে। অথচ, ঘটনার পর থেকে কলেজের বাইরে বহু মানুষের জমায়েত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করুক আদালত। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই নির্দেশ। একইসঙ্গে ঘটনার প্রতিবাদে ধর্না কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পাল্টা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজেপিকে হাসপাতাল থেকে সাত কিলোমিটার দুরে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে ধর্না কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছে আদালত। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চালাতে পারবে তারা। আদালত জানিয়েছে, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যেহেতু ধর্নায় অনুমতি দিয়েছে, তাই এবিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের নির্দেশ, দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
তবে গণধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদকে ‘ইশ্যু’ বানিয়ে বিজেপি আসরে নামলেও, তাদেরই এক কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। তার নাম অপু বাউরি। আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। দুর্গাপুর পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের বিজড়া গ্রামের বাউরি পাড়ার সক্রিয় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত অপু। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নীরব গেরুয়া শিবির। অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেও, অপুর নাম মুখে আনছে না তারা। যা নিয়ে পাল্টা সুর চড়িয়েছে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। শাসকদলের নেতারা দাবি করেছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল এই অপু। সব জেনে বুঝেই বিষয়টি নিয়ে নীরব গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ বলেন, ‘ধৃত অপু বাউরি একজন সক্রিয় বিজেপি কর্মী। নিজেদের অস্বস্তি এড়াতেই বিরোধী দলনেতা থেকে এখানকার বিজেপি বিধায়ক তার নাম উল্লেখ করছে না।’ তবে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের দাবি, গণধর্ষণে ঘটনায় ধৃত অপু বাউরির সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। তৃণমূল এসব রটাচ্ছে। তৃণমূলের মুখপাত্র উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘লক্ষণ ঘোড়ুইয়ে ধর্ষণ নিয়ে মুখ খোলা শোভা পায় না। নিজের পরিবারের সদস্যের কীর্তি নিয়ে তিনি নীরব ছিলেন কেন?’
অন্যদিকে, এই ঘটনায় যথেষ্ট তৎপর ওড়িশার বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি। এদিন দুর্গাপুরে এসেছিলেন বালেশ্বরের সাংসদ প্রতাপ ষড়ঙ্গি। তিনি ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ঢুকতে চান। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে বাধা দেয়। তা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় কলেজ ক্যাম্পাসে। শেষে অবশ্য তিনি হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন।