• মথুরা গ্রামের কালী রাতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা আরামবাগ: গোঘাটের মথুরা গ্রামের গঙ্গোপাধ্যায়দের কালীপুজো ঘিরে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে দেবীর স্বপ্নাদেশে শুরু হয় এই প্রাচীন কালীপুজো। এখানে দেবী বাড়িতে নয়, বাড়ি থেকে কিছু দূরে গড়ে ওঠা মন্দিরে পুজো পান। গাছগাছালি ঘেরা আশ্রমে দেবী মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে পঞ্চবটি বৃক্ষ। কয়েক শতক প্রাচীন এই পুজোয় ভক্তি ও নিষ্ঠাই সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। 

    এই প্রসঙ্গে গঙ্গোপাধ্যায় বংশের সদস্য প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, প্রায় পাঁচশো বছর আগে আমাদের পরিবারের পূর্বপুরুষ মথুরা গ্রামে জন্মভিটেতে ঘটে মা কালীর পুজো করতেন। এক সময় পূর্বপুরুষ ত্রৈলোক্যনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে মা স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেছিলেন, বাড়িতে নয়, বাড়ি থেকে কিছু দূরে বাজারপাড়ায় একটি মন্দির তৈরি করে আমার পুজো করলে গ্রামেরই মঙ্গল হবে। পরদিন সকালে গিয়ে দেখা যায় ঠাকুরের ঘট উল্টে পড়ে আছে! এরপরেই ত্রৈলোক্যনাথের আমল থেকেই বাজারপাড়ায় মন্দির নির্মাণ করে মা কালীর পুজোপাঠ শুরু হয়। 

    প্রদীপবাবুর সংযোজন, সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, বাড়ি থেকে কিছু দূরে গাছপালায় ঘেরা আশ্রমের মধ্যে পূজিতা হচ্ছেন মা কালী। ২০০১ সালে এই আশ্রমের পাশে পঞ্চবটির প্রতিষ্ঠা হয়। নিয়ম অনুযায়ী পূবে অশ্বত্থ, পশ্চিমে বট, উত্তরে বিল্ব, দক্ষিণে আমলকি ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অশোক গাছ রয়েছে। ‌ প্রত্যেকটি বৃক্ষের নিচে এক একটি দেবতার পূজা হয়ে থাকে। এখানে দেবী শ্বেতপাথরের তৈরি। ‌৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ত্রিমুন্ডির উপর অধিষ্ঠিতা মা কালী। ‌ সামনে  রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। ‌ 

    পুরাতন রেওয়াজ অনুযায়ী মা কালীর এই আশ্রমে এখনও শাঁখ বাজানো নিষিদ্ধ। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, দেবী রাত বারোটার সময় ঘোড়ায় চড়ে সামনের দিঘিতে স্নান সেরে গ্রামে ঘুরতে বের হন। ‌ তাই রাতে কারওর আশ্রমে থাকার অনুমতি নেই। দেবী এখানে বাজারে কালী বা ডাকাতে কালী নামেও পরিচিতা। এই দেবী খুবই জাগ্রত হাওয়ায় আগে ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মাকে প্রণাম করে যেত। ‌ কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় ধুমধামের সঙ্গে এই পুজোয় ভক্তদের জন্য খিচুড়ি ভোগের আয়োজন হয়‌। 

    তবে পুরনো রেওয়াজ ভেঙে ছাগবলি বন্ধ হয়েছে। এই ব্যাপারে প্রদীপবাবু বলেন, আমাদের মনের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ষড়রিপুকে মায়ের কাছে বলি দিতে গিয়ে আমরা আনন্দের দিনে নিরীহ প্রাণীকে হত্যা করছি। আমরা ভুলে যাচ্ছি সবাই মায়ের সন্তান। তাই আমরা পাঁঠাবলি বন্ধ করে সন্দেশের একটি বড় অসুর তৈরি করে তা মায়ের কাছে বলি দেওয়ার প্রথা চালু করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)