বিহারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ বাড়িয়ে রাখছে সব পক্ষ। কোনও ‘বৈধ’ ভোটারের নাম বাদ গেলে কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের ডাক দিয়ে রেখেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতায় শহিদ মিনার ময়দানে আগামী নভেম্বরের গোড়ায় এসআইআর-প্রশ্নে বড় জমায়েতের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের দফতরের সামনে মঞ্চ বেঁধে ‘ভোট চুরি’র প্রতিবাদে সই সংগ্রহ করে চাপ রাখতে চাইছে কংগ্রেসও। অন্য দিকে, বিজেপির একাধিক বিধায়কের পরে এ বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ডাক দিয়েছেন, ‘নো এসআইআর, নো ইলেকশন’!
রাহুল গান্ধীর তোলা ‘ভোট চোর, গদি ছোড়’ স্লোগান সামনে রেখে দেশ জুড়ে সই সংগ্রহে নেমেছিল কংগ্রেস। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই অভিযানের সমাপ্তি হওয়ার কথা আজ, বুধবার। সেই উপলক্ষে বিবাদী বাগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কাছে কংগ্রেসের মঞ্চ করা হচ্ছে। সেখানেই দিনভর চলবে গণ-স্বাক্ষর সংগ্রহ। প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে ও বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের ব্যবস্থাপনায় সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার কথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার-সহ দলের রাজ্য নেতৃত্বের। পরের দিন, বৃহস্পতিবারই সিইও-র সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছে কংগ্রেস। বিহার থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এসআইআর প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই কোন কোন বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, সেই সংক্রান্ত দাবি কমিশনে জানাতে চান কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিজ্ঞপ্তি জারির আগে রাজ্য ও জেলা স্তরে সর্বদল বৈঠক করা তার মধ্যে অন্যতম। ভোটার তালিকার সংশোধন শুরুর আগে কমিশনকে ‘সতর্ক’ করাই কংগ্রেসের উদ্দেশ্য।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘বুথ লেভল অফিসার (বিএলও) হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের বেশি এবং কিছুটা বিজেপির লোকজনকে নিয়োগ করার অভিযোগ আসছে। এই রকম চললে গোটা প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা কী ভাবে থাকবে? বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা আগাম বলে দিচ্ছেন তালিকা থেকে কত নাম বাদ যাবে! কমিশন কি বিজেপির লক্ষ্যপূরণ করার যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে?’’ সূত্রের খবর, সাংগঠনিক স্তরে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসআইআর-এর সময়ে রাজ্যের অন্তত ৯০% বুথে বিএলএ-২ (বুথ লেভল এজেন্ট) রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিহারের অভিজ্ঞতা মনে রেখে দলের তরফে কী কী করণীয়, জেলায় জেলায় কর্মশালা করে সে সব ব্যাখ্যা করবেন প্রদেশ কংগ্রেসের এসআইআর সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির চেয়ারপার্সন প্রসেনজিৎ বসু। বুথ স্তরে নজর রেখেই আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জেলা, ১০ নভেম্বরের মধ্যে ব্লক এবং ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বুথ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে গত অগস্টে।
এরই মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন অনেক তথ্য পেয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকেছে। ম্যাপিংয়ের কাজ চলছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় ৪০%-এর বেশি এই ধরনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।’’ কমিশনের তথ্য বিজেপি নেতারা কী ভাবে বলছেন, এই প্রশ্নই তুলছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পাশাপাশিই শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘বাংলায় এসআইআর হবেই। তৃণমূল যদি বাধা দেয়, আমরাও বলব—‘ নো এসআইআর, নো ইলেকশন’!