রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার, মেদিনীপুরে দীপক সরকার! পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু থেকে রাজনৈতিক শিবিরে এমন কথা চালু ছিল সে কালে। বাম আমলের ডাকসাইটে নেতা, অবিভক্ত মেদিনীপুর এবং পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপকের (৮১) দেহদান করা হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে মেদিনীপুরে এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ। অম্তিম যাত্রায় ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ, দলের জেলা সম্পাদক বিজয় পালেরা। রাজনীতির বেড়া ভেঙে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন মেদিনীপুরের পুর-প্রধান, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌমেন খান, জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবাশিস ঘোষ, বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসও। মেদিনীপুরের বাড়িতে সোমবার রাতে মৃত্যু হয় দীপকের।
বাম আমলে কেশপুর, গড়বেতা, চমকাইতলা-কাণ্ডের সময় দীপক ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক। লালগড়, নেতাই, জঙ্গলমহল পর্বেও তিনিই ছিলেন দায়িত্বে। মাওবাদী দাপটের সময়ে ‘সশস্ত্র প্রতিরোধে’র তত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক ছিল বিস্তর। পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে লক্ষ্ণণ শেঠদের পিছনে ছেকে নন্দীগ্রাম-পর্বে যথাসাধ্য সাহায্য করেছিলেন দীপকই। পাশাপাশিই, পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিকাঠামো উন্নয়নে তাঁর উদ্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বাম নেতৃত্ব। এক সময়ে জেলায় দীপক-অনুগামী এবং সূর্যকান্ত-ঘনিষ্ঠদের ‘বিরোধ’ বেধেছিল। পরে সূর্যকান্ত নারায়ণগড়ের বিধায়ক থেকে মন্ত্রী হয়ে রাজ্য-রাজনীতির পরিসরে চলে যান। দীপক ছিলেন জেলাতেই। তাঁর এক ‘শিষ্য’ সুশান্ত পরে জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন, নানা অভিযোগে জড়িয়ে দলে তিনি এখন ‘ব্রাত্য’। তবে দীপকেরই আর এক অনুগামী বিজয়ের হাতে এখন জেলার দায়িত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের কথায়, ‘‘দীপকদা কঠিন সময়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে যখন দল পড়েছে, যখন সমস্ত প্রতিক্রিয়ার শক্তি এককাট্টা হয়েছে, কর্মীরা আক্রান্ত ও ঘরছাড়া হয়েছেন, তখন ধৈর্য সহকারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের কর্মীরা আরও জোরদার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দীপকদা’র স্মৃতি অম্লান রাখবেন।’’