• বার্ধক্যভাতা ১৫০০ করুন, প্রাপ্য আটকে নিদান কেন্দ্রের
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: কেন্দ্রের লাল ফিতের ফাঁসে আটকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা। পুরোটাই বাংলার প্রাপ্য। এখনও ১০০ দিনের কাজ সহ বহু প্রকল্পে টাকা ছাড়ার নামগন্ধ নেই। অথচ, এই পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষার নামে দায়ভার রাজ্যের কাঁধেই চাপিয়ে চলেছে মোদি সরকার। সূত্রের খবর, বার্ধক্যভাতা আগামী দিনে দেড় হাজার টাকা করার জন্য চাপ আসছে দিল্লি থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই এই খাতে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা দিয়ে থাকে। সেই অঙ্কটা বাড়াতে নবান্নের অসুবিধাও নেই। কিন্তু তার জন্য যে কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রেই সাফ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকী, খাতায় কলমে জাতীয় সমাজ সুরক্ষা প্রকল্পের (এনএসএপি) মাধ্যমে বার্ধক্যভাতা, বিধবা ভাতা এবং বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্নদের প্রতি মাসে আর্থিক সহায়তা দেওয়াকে ১০০ শতাংশ কেন্দ্রীয় উদ্যোগ বলে তারা দাবি করে থাকে, সেখানেও এবার কাটছাঁট করার পরিকল্পনা চলছে। এই প্রকল্পে বর্তমানে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭৯ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য মাত্র ২০০ টাকা করে পেনশন দেয় কেন্দ্র। আর ৮০ ঊর্ধ্বদের জন্য ৫০০ টাকা। প্রতি মাসে এই ভাতার সঙ্গে যথাক্রমে ৮০০ ও ৫০০ টাকা জুড়ে মোট হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা দেয় রাজ্য সরকার (কেন্দ্রের ভাষায় টপ আপ)। এই পুরোটাই কেন্দ্রের হিসেবের বাইরে। রাজ্যের ২১ লক্ষ প্রবীণ ব্যক্তি এই ভাতা পেয়ে থাকেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, জয় বাংলা প্রকল্পের অধীনে আরও ১ কোটির বেশি প্রবীণকে হাজার টাকা করেই ভাতা দিয়ে থাকে নবান্ন। সব মিলিয়ে এই খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় রাজ্যের। এখন কেন্দ্র যে সুরে কথা বলছে, তাতে এনএসএপি’ও আর সম্পূর্ণ কেন্দ্রের প্রকল্প থাকবে না। বরং তা আর্থিক সহায়তা প্রকল্পে বদলে যাবে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও রাজ্যকে নিজের অংশের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বাধীন কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর পাঠানো কনসেপ্ট পেপার অন্তত সেই কথাই বলছে।

    কেন্দ্র সাফ জানাচ্ছে, এতদিন বার্ধক্যভাতার খাতে যে ২০০ ও ৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হত, তা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করবে তারা। কিন্তু আগামী ষষ্ঠদশ অর্থ কমিশনের সময়কালে (২০২৬-২০৩১ অর্থবর্ষ) এনএসএপি প্রকল্পের জন্য এরও পুরো টাকা মোদি সরকার দেবে না। ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩৬০ টাকা দেবে কেন্দ্র। বাকিটা দিতে হবে রাজ্যকেই। উপরন্তু, নিজের অংশের টপ আপও বাড়াতে হবে বাংলাকে। কারণ, সেটা না করলে অঙ্কটা কিছুতেই দেড় হাজারে পৌঁছবে না।

    মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাজ্যগুলির কত করে টপ আপ দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই ফের একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্স করবে কেন্দ্র। সেই বৈঠকেই এই গড় ভাতা অন্তত ১৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘রাজ্য কত টাকা দেবে, সেই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়ার ওরা কে? এর থেকেই পরিষ্কার, দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)