নিজস্ব প্রতিনিধি, দার্জিলিং: দৃশ্য-১: সকাল ৭টা। নীল আকাশ। আশ্বিনের ঝকঝকে রোদে ঝলমল করছে ম্যাল রোডের হাওয়া ঘর। বেশ কিছু লোকের জটলা। গায়ে হালকা হুডেড জ্যাকেট কিংবা মোটা গেঞ্জি। তাঁদের মধ্যের মহিলাদের একাংশ মোবাইল ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে অবাধ্য চুল, লিপস্টিক ও ওড়না ঠিক করছেন। এরপর শ্বেশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পিছনে রেখে চলছে সেলফি তোলার হিড়িক। ওই মহিলাদের মধ্যে একজন বেহালার দীপালি সাহা। তিনি বলেন, “অনেক চেষ্টা করে কয়েক বছর পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এলাম পাহাড়ে। রাস্তার জন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গিয়েছে। তাই আনন্দে হুটোপুটি করছি।”দৃশ্য-২:শিরশিরে হিমেল বাতাস। হালকা শীতের আমেজ। স্থানীয়দের কেউ ম্যাল রোডের চৌরাস্তায় জগিং করছেন, কেউ দৌ়ড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আবার রোডের দু'পাশে বেঞ্চে বসে চা পান করছেন, গল্প করছেন। সেই সময়ই হোটেল থেকে রাস্তায় নেমে পড়েছেন পর্যটকরা। কেউ কেউ ঘোড়া সাফারিও করছেন। ওই পর্যটকদের মধ্যে বহরমপুরের গৃহবধূ সবিতা দাস বলেন, “দশমীর পরের দিনই পাহাড়ে আসার কথা ছিল। হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলে ভ্রমণ সূচি পরিবর্তন করে মঙ্গলবার পাহাড়ে এসেছি। এখানে এসে বুঝিতে পারলাম- ভয়ের কিছু নেই। দুর্যোগ কাটিয়ে পাহাড় স্বাভাবিক।”সংশ্লিষ্ট দু'টি ছবি থেকেই স্পট আলোর উৎসব দীপাবলিতে পাহাড়ে ঢল নামবে পর্যটকদের। যার প্রভাব ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলে বলেই পর্যটন ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। তাঁদের বক্তব্য, দুর্যোগের পর ভয় ও সংশয় কাটিয়ে পাহাড়মুখী হচ্ছেন পর্যটকরা। এখন পাহাড়ে হোটেল ও হোমস্টের প্রায় ৫৬ শতাংশ রুম বুকিং। এটা আরও বাড়বে।প্রায় দু'সপ্তাহ আগে প্রকৃতির রোষে তছনছ হয়ে যায় পাহাড়ের 'রানি' দার্জিলিং। সেই তাণ্ডবের ক্ষত এখনও বিদ্যমান। বালাসন নদীর ব্রিজ ভাঙায় মিরিক থেকে দুধিয়া হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। দার্জিলিংয়ের রোহিনী রোডও বন্ধ। এই অবস্থায় সংস্কারের জন্য বন্ধ্য করা হয়েছে কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সংশ্লিষ্ট তিনটি রাস্তা বন্ধ থাকলেও ফের পর্যটকের ভিড়ে সরগরম পাহাড়।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তা, ম্যাল রোড। কেউ মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে এসে চৌরাস্তা বসছেন৷ আবার কেউ চিড়িয়াখানায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ রাজভবন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বাসস্থান, ভানু ভবনে উকিঝুকি মারছেন। বাজার থেকে কিনছেন পাহাড়ের সামগ্রী। পর্যটকদের ভিড়ের এমন ট্রেন্ড দেখে উচ্ছ্বসিত ট্যাক্সি চালক, হোটেল মালিক সহ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে হোটেলের সংখ্যা ১৫ শো, আর হোমস্টের সংখ্যা ৫০০। ট্যুর অপারেটার সম্রাট সান্যাল বলেন, “ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অনেকে ভেবে ছিলেন পাহাড় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। সেই ভাবনায় সেগুড়ে বালি। সকলের সহযোগিতায় ভয় জাটিয়ে পাহাড়ে আসছে পর্যটকরা। এখন প্রায় ৫৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। দীপাবলিতে বুকিংয়ের সেই হার আরও বাড়বে বলেই আশা করছি।”দার্জিলিং পাহাড় হোটেল আসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেজি লামা বলেন, “বিপর্যয়ের সময় সামান্য কিছু পর্যটক ট্যুর বাতিল করেছিলেন। অধিকাংশই ট্যুর রিসিডুল করেছেন। অর্থাৎ অক্টবরের প্রথম সপ্তাহের পরিবর্তে ট্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে করেছেন। সেই সঙ্গে নতুন বুকিংও হচ্ছে। এই মুড ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে বলেই আশাবাদী।”