অবশেষে সমাধান হল দলিত আইপিএস অফিসার ওয়াই.পুরণ কুমারের ময়নাতদন্ত সংক্রান্ত অচলাবস্থা...
আজকাল | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবশেষে শেষ হল প্রয়াত আইপিএস অফিসার ওয়াই. পুরণ কুমারের ময়নাতদন্ত নিয়ে টানাপোড়েন। প্রায় এক সপ্তাহের অচলাবস্থার পর মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সম্মতির পর আজ সকালে চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিজিআইএমইআর)-এ ময়নাতদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। আজ দুপুরের মধ্যেই তা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টি আজ বিকেল ৪টেয় সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
ওয়াই. পুরণ কুমার গত ৭ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি এক সুইসাইড নোটে অভিযোগ করেন যে, তাঁকে তাঁর সিনিয়র সহকর্মীরা জাতিগত বৈষম্য ও অপমানের শিকার করেছেন। সেই অভিযোগ ঘিরেই রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর মৃত অফিসারের পরিবার ময়নাতদন্তে অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। তাঁদের দাবি ছিল, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের গ্রেপ্তার করা হোক এবং তদন্ত নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হোক। এর মধ্যে নতুন জটিলতা তৈরি হয়, যখন অপর এক পুলিশ সদস্য আত্মহত্যা করে ওয়াই. পুরণ কুমারের বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ তোলে।
পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় চণ্ডীগড় পুলিশ আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায়, যাতে আইনগতভাবে ময়নাতদন্ত করা যায়। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল হরিয়ানা সরকার রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল শত্রুজিৎ সিং কাপুরকে ছুটিতে পাঠায়, যা ঘটনায় নতুন মোড় আনে।শেষ পর্যন্ত হরিয়ানা সরকারের আশ্বাস ও চণ্ডীগড় পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে মৃত অফিসারের পরিবার ময়নাতদন্তে সম্মতি দেয়।
এক বিবৃতিতে মৃত অফিসারের স্ত্রী ও আইএএস কর্মকর্তা অমনীত পি. কুমার বলেন, “চণ্ডীগড় পুলিশের পক্ষ থেকে ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস এবং হরিয়ানা সরকারের পক্ষ থেকে দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আমি ময়নাতদন্তে সম্মতি দিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, “প্রমাণগত দিক থেকে সময়মতো ময়নাতদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ন্যায়ের স্বার্থে আমি সম্মতি দিয়েছি, যাতে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ডের মাধ্যমে, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে, ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে এবং পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি সহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।”
অমনীত কুমার বলেন, “আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে বিচারব্যবস্থা ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের ওপর। আমি আশা করি, তদন্ত পেশাদার, নিরপেক্ষ ও সময়সীমাবদ্ধ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে, যাতে সত্য আইন অনুযায়ী প্রকাশ পায়। আমি তদন্তকারী দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব, যাতে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।”
এদিকে, পিজিআইএমইআর-এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইজিপি পুষ্পেন্দ্র কুমার, এসএসপি কনওরদীপ কৌর, সেক্টর ১১ থানার এসএইচও জয়বীর রানা এবং পিজিআই পুলিশ পোস্টের ইনচার্জ বাবিতা নিজে থেকে নিরাপত্তা তদারকি করছেন। পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে হাসপাতালের মর্গে পৌঁছে মৃতদেহের শনাক্তকরণ সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে ওয়াই. পুরণ কুমার ন্যায় মঞ্চের ৩১ সদস্যের কমিটির মুখপাত্র মুকেশ কুমার জানান, “পরিবারের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। তবে আমাদের ন্যায়ের লড়াই চলবে। পরিবারের পাশে থেকে আমরা সত্য উদঘাটনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” এই ঘটনার পর হরিয়ানার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জাতিগত বৈষম্য ও পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।