• দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে গণধর্ষণের চেষ্টা, দেরিতে এফআইআর দায়ের ঘিরে বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস...
    আজকাল | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির মেহরৌলির ময়দানগড়ি এলাকার দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে (SAU) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের চেষ্টা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর, মঙ্গলবার পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের হয়েছে। অভিযোগ, রবিবার রাতে চারজন পুরুষ মিলে ওই ছাত্রীর ওপর যৌন আক্রমণের চেষ্টা চালায়। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছে বলে জানা গেছে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ময়দানগড়ি থানায় দায়ের করা এফআইআরে ওই ছাত্রী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছিল। তিনি বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে এক অচেনা ইমেল আইডি থেকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনের কাছে গভীর রাতে যেতে বলা হয়। পরদিন একই আইডি থেকে আরও একটি ইমেল আসে, যেখানে অশালীন ইমোজি ও বার্তা পাঠানো হয়। এতে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি এবং নিজের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন।

    ছাত্রীটি বলেন, “আমি বন্ধুবান্ধবদের জানাই যে এক অচেনা আইডি থেকে আমাকে এ ধরনের ইমেল পাঠানো হচ্ছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল কিন্তু কাউকে দেখা যায়নি।” এরপর পরদিন আরেকটি ইমেল আসে, যাতে তার ইমেল ডিসপ্লে ছবির বিকৃত সংস্করণ পাঠানো হয়। সেই ছবিতে তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। পাঠানো ইমেলে হুমকি দেওয়া হয়, নির্দেশ না মানলে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠানো হবে।

    এই ইমেল পাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, কিন্তু পরে সাহস সঞ্চয় করে ক্যাম্পাসের ব্যস্ত অংশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, “আমি কনভোকেশন সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলাম। জায়গাটি তখন নির্মাণাধীন ছিল এবং সন্ধ্যার পর কাজ বন্ধ থাকে।” সেখানে এক নিরাপত্তারক্ষী তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করে তিনি ওই সময়ে কী করছেন। তিনি বলেন, তিনি ডাইনিং হলে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই নিরাপত্তারক্ষী ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলেন, এবং কিছুক্ষণের মধ্যে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি সেখানে আসে। পরে আরও দু’জন এসে হাজির হয়।

    ছাত্রীটির অভিযোগ, “আমি সিঁড়িতে বসে ছিলাম। তখন তারা আমাকে উঠে যেতে বলে। আমি যখন উঠে দাঁড়াই, তখনই একজন আমার কাঁধ চেপে ধরে এবং বাকিরা আমার ওপর হামলা চালায়।” ওই অবস্থায় এক ব্যক্তি তার মুখে একটি ট্যাবলেট ঢোকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি সেটি থুতুর মতো করে  ফেলে দেন। কিছুক্ষণ পর একটি খাবারের ট্রলি টানা শব্দ শুনে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তাদের একজন মেয়েটিকে চড় মারে।

    এফআইআরে উল্লেখ নেই, ইমেল পাঠানো ব্যক্তিরা এবং হামলাকারীরা একই ব্যক্তি কি না। তবে ছাত্রীটি আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি এবং তাকে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেন। তিনি জানান, হোস্টেলের ওয়ার্ডেন উল্টে তাকে দোষারোপ করেন। “তোমরা মেয়েরা তো অনেক বয়ফ্রেন্ড রাখো,” ওয়ার্ডেন এমন মন্তব্য করেন বলে এফআইআরে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে ‘অশ্লীল আচরণ’ হিসেবে অভিযোগ নথিভুক্ত করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু ছাত্রীর বিস্তারিত বর্ণনা শোনার পর ‘গণধর্ষণের চেষ্টা’র মামলা দায়ের করা হয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায়।

    এদিকে, সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ উত্তাল হয়ে ওঠে। শতাধিক ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভে অংশ নেন এবং অভিযুক্তদের নাম প্রকাশের দাবি জানান। এক প্রতিবাদী শিক্ষার্থী জানান, “যে ইমেল থেকে মেয়েদের পাঠানো হয়েছিল, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল আইডি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইপি অ্যাড্রেস ট্রেস করে অপরাধীদের নাম প্রকাশ করুক।” আরও এক শিক্ষার্থীর দাবি, প্রশাসন এই ঘটনাকে তুচ্ছ বলে দেখছে। “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো সংবেদনশীলতা নেই, বরং তারা ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করছে,” অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

    চাপ বাড়তে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রথমে কেবল কর্মকর্তাদের নিয়েই কমিটি তৈরি হলেও পরে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ তীব্র হলে কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি যুক্ত করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটির কার্যবিবরণী তাদের জানানো হয়নি এবং বৈঠক ভিডিওগ্রাফ করতেও প্রশাসন নিষেধ করেছে। এই ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে গভীর ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনে পরিণত করতে হবে।
  • Link to this news (আজকাল)