• ভয়ংকরা কালী! ৪৫ ফুট লম্বা মায়ের এক হাতে পৃথিবী, অন্য হাতে সাদা পায়রা, বাকি দুই হাতে...! কালীপুজোয় ক্ষীরপাইয়ের 'বড়মা'...
    ২৪ ঘন্টা | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • চম্পক দত্ত: পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার  ক্ষীরপাই পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড চিরকুনডাঙা এলাকায় রয়েছেন কংক্রিটের তৈরি ৪৫ ফুট উচ্চতার বিশালাকার এক কালীপ্রতিমা (Goddess Kali), যা ভক্তদের কাছে 'বড়মা' (Boro Ma) নামে পরিচিত। শুধু চন্দ্রকোণা নয়, এই জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা, এমনকি ভিনরাজ্যের মানুষও এই কালীকে বড়মা নামেই জানে। ক্ষীরপাইয়ের বড়মার পুজোর অপেক্ষায় থাকেন অগণিত মানুষ। পুজোর সময়ে আশপাশের মানুষ ছাড়াও জেলা ও ভিন জেলার দূরদূরান্তের মানুষও ভিড় জমান এখানে। 

    শ্মশান​কালী

    শ্মশানকালী হলেও এ পুজোয় বলি হয় না। সমস্ত রীতি মেনেই এখানে পুজো হয়। পুজোর পরের দিন হাজার হাজার মানুষ আসেন মায়ের খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ার জন্য। শশ্মানের উপর বড়মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা শুদ্ধদেব রায়। প্রথমে মাটির চালায় প্রতিমা তৈরি করে পুজোর শুরু করেন প্রতিষ্ঠাতা শুদ্ধদেব রায়, যাকে ছোটো মা নামেই ডাকা হত। তবে বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় একবার বন্যায় ছোটো মায়ের মাটির চালা ডুবে গিয়ে মূর্তি ভেঙে যায়। মায়ের একটি ভাঙা হাত রয়ে গিয়েছিল। সেটি এবারের বন্যায় তলিয়ে যায়। বন্যা মিটতেই ছোটো মায়ের মন্দিরের সঙ্গে মূর্তি তৈরি করা হয়। ছোটো মায়ের পাশেই ৪৫ ফুট উচ্চতার কংক্রিটের মায়ের মুর্তি রয়েছে। যা জেলা কেন, রাজ্যও এত বড় মাপের কালী প্রতিমা নেই বলেই মনে করা হয়। 

    প্রণামীতে নিষেধ

    অমাবস্যা তিথি ও কালীপূজোর সময় ছাড়া বড়মায়ের মন্দিরে থাকেন না কোনও পূজারী। তিথির সময় ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত মানুষ মায়ের দর্শনে আসেন। তাঁরা নিজেরাই নিজের মতো করে মায়ের পুজো দিতে পারেন পুরোহিত ছাড়াই। ভক্তদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় মন্দিরের পুজো-অর্চনার কাজ। যে যাঁর নিজের মতো করে নিজে হাতে পুজো দেন বড়মাকে। আর এজন্যই প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম লেগেই থাকে এখানে। বিশালাকার কালী মন্দিরের বৈশিষ্ট্য নজরকাড়ে সকলেরই। যেমন আগত ভক্তদের কোনওরকম দক্ষিণা না দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ আছে। কোনও প্রণামী বক্স নেই মন্দিরে। কোনও আর্থিক সাহায্য করা বা দক্ষিণা হিসেবে কোনও পয়সা দেওয়া যাবে না মন্দিরে--মন্দির চত্বরে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক ভক্তের দাবি, মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তা পূরণ হবেই। বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্যও অনেকে মায়ের শরণাপন্ন হন, তাঁদের অনেকের দাবি, তাঁরা কখনও বিমুখ হননি। 'অর্থের বিনিময়ে নয়, নিজে হাতে পুজো করুন মাকে যাচাই করুন' মন্দিরে লেখা এমনই বাণী চোখে পড়বে সকলের। 

    পৃথিবী, পায়রা এবং

    বিশালাকার কংক্রিটের বড় মায়ের এক হাতে রয়েছে পৃথিবী, এক হাতে রয়েছে সাদা পায়রা, বাকি দুই হাতে কাতান ও মুন্ডু। মায়ের এই রূপের পাশাপাশি, রয়েছে ধরিত্রীর রক্ষাকর্তা ও শান্তির বাহক হিসেবে একহাতে পৃথিবী ও অপর হাতে পায়রা ধরে থাকা। দীপাবলী কালী পুজোর দিন বড়মার মন্দিরে হাজারও ভক্তসমাগম হয়ে থাকে। বড়মার পুজোয় বলি হয় না,তবে পাশে  ছোটো মায়ের পুজোয় বলি হয়। বলির মাংস প্রসাদ হিসাবে পরদিন খিচুড়ি প্রসাদে মিশিয়ে দিয়ে ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ ভোজন করানো হয়। পুজোর পরদিন বড়মায়ের মন্দিরে প্রসাদ খেতে হাজার দশেক ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে বলে জানান মন্দিরে প্রতিষ্ঠাতা। সামনেই কালী পুজো, পুজোয় জাঁকজমক না থাকলেও ভক্তদের আরাধনায় প্রতিবছর কালী পুজোয় গমগম করে ক্ষীরপাইয়ের বড়মা।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)