দিনরাত এক করে চলছে দেবীর খাঁড়া বানানো, ব্যস্ততার মধ্যেও উপার্জন নিয়ে দুশ্চিন্তায় নবদ্বীপের শিল্পীরা
প্রতিদিন | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: দুর্গাপুজো শুরুর অনেক আগে থেকেই চলছে ব্যস্ততা। কালীপুজোর আগে সেই ব্যস্ততা কার্যত তুঙ্গে। দিনরাত এক করে চলছে খাঁড়া তৈরির কাজ। বিভিন্ন মাপের তৈরি খাঁড়া ঝুলছে কারখানার বিভিন্ন অংশে। প্রতি বছরের মতো এবারও খাঁড়ার চাহিদা আছে। কিন্তু কাঁচামালের দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা।
নদিয়ার নবদ্বীপ এলাকায় খাঁড়া শিল্পী হিসেবে পরিচিত রাজু অধিকারী। বংশ পরম্পরায় ওই খাঁড়া অধিকারী পরিবার তৈরি করে আসছে বলে খবর। দুর্গাপুজোর আগে থেকে ব্যস্ততা বাড়ে অধিকারী পরিবারের শিল্পীদের মধ্যে। কালীপুজোয় সেই ব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। নাওয়াখাওয়া ভুলে তখন কাজ করতে হয় বলে খবর। কেবল পিতল দিয়ে এখানে খাঁড়া তৈরি হয়। নবদ্বীপের তৈরি এই রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলাতেই পুজোর আগে যায়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও নবদ্বীপের তৈরি খাঁড়ার চাহিদা আছে।
জানা গিয়েছে, দুর্গা প্রতিমা তো বটেই কালী, জগদ্ধার্থীর মূর্তির সঙ্গে খাঁড়া দেখা যায়। কালীপুজোর চল রাজ্যের প্রায় সর্বত্র। ফলে পিতলের খাঁড়ার চাহিদাও এইসময় অনেকটা বেশি থাকে। জগদ্ধার্থী পুজো পেরিয়ে রাশের পর কাজের চাপ কমে বলে জানিয়েছেন শিল্পী রাজু অধিকারী। একাধিক কর্মীকে কাজের জন্য রেখেছেন রাজু। পুজোর সময় ১০ থেজে ১৫ জন কর্মী এখানে কাজ করেন প্রতি বছর। এবারও খাঁড়া ব্যস্ততা অনেকটাই বেশি। শিল্পী রাজু অধিকারী জানান, তাঁদের তৈরি পিতলের খাঁড়া ভিনরাজ্যেও এখন পাড়ি দিচ্ছে। বিদেশ থেকেও এখন পিতলের খাঁড়ার বরাত আসছে।
পিতলের কাঁচামালের দাম প্রতিবছরই বাড়ছে। এবারও দাম অনেকটাই বেড়েছে। বাজারের অন্যান্য জিনিসের দামও যথেষ্ট চড়া। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনার বিক্রি হওয়া খাঁড়ার দাম বাড়েনি। ফলে উপার্জন আগের থেকে অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন রাজু। জানা গিয়েছে, ওই এলাকার পিতলের ছোট খাঁড়ার দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু। এছাড়াও বড় প্রমাণ মাপের খাঁড়ার দাম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এর মাঝেও বিভিন্ন দামের খাঁড়া আছে।
এখন আর কেবল খাঁড়াই নয়, পিতলের নরমুণ্ডের মালাও এখন এখানে তৈরি হয়। কালীমূর্তির গলায় এই নরমুণ্ডের মালা সজ্জিত হয়। বাড়ির মহিলারা মূলত এই কাজ করেন। এই মুহূর্তে মহিলারাও দিন-রাত এক করে কাজ করছেন। নবদ্বীপের রাশ উৎসব শেষ হলে কাজের চাপ কমবে বলে কর্মীরা জানাচ্ছেন। নতুন করে দক্ষ কারিগর সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দিনের পর দিন কাঁচামালের দামও বাড়ছে। এমনভাবে চললে কীভাবে পরবর্তীতে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে? সেই প্রসঙ্গও উঠতে শুরু করেছে।