নিজস্ব প্রতিনিধি, দার্জিলিং: উৎসবের মরশুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পাহাড়ে বুকিং বাতিল করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সেই দুর্যোগ কাটিয়ে পাহাড় এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে। পর্যটন ব্যবসায়ী কিংবা হোটেল মালিকদের ফোন পেয়ে ট্যুর রিশিডিউল করে ফের পাহাড়ে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। দীপাবলিতে পাহাড়ে পর্যটকের ঢল নামবে, দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এরপর আছে বড়োদিন। ইংরেজি নিউ ইয়ার পর্যন্ত ভলো ব্যবসার প্রত্যাশায় হোটেল, হোমস্টে, গাড়ি, রেস্তোরাঁ মালিকরা। তাঁদের বক্তব্য, দুর্যোগের পর ভয় ও সংশয় কাটিয়ে পাহাড়মুখী হচ্ছেন পর্যটকরা। এখন পাহাড়ে হোটেল ও হোমস্টের প্রায় ৫৬ শতাংশ রুম বুকিং। এটা আরও বাড়বে।
বুধবার সকাল ৭টায় ম্যাল রোডে ঝকঝকে রোদ, সঙ্গে শীতল হাওয়া। বেশকিছু লোকের জটলা। কমবেশি সকলের গায়েই গরম পোশাক, হুডি। ম্যালে কেউ কেউ ঘোরার পিঠ সাওয়ার। মহিলাদের কেউ কেউ মুঠোফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে চুল, লিপস্টিক ঠিক করেন। এরপর শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পিছনে রেখে সেলফি তোলার হিড়িক। ওই মহিলাদের মধ্যে একজন বেহালার দীপালি সাহা। বলেন, অনেক চেষ্টা করে কয়েকবছর পর পাহাড়ে এলাম। রাস্তার জন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে মন ভরে গেল। ম্যালেই দাঁড়িয়ে থাকা বহরমপুরের গৃহবধূ সবিতা দাস বলেন, দশমীর পরদিন পাহাড়ে আসার কথা ছিল। হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলে ভ্রমণসূচি পরিবর্তন করে মঙ্গলবার এসেছি। এখানে এসে বুঝিতে পারলাম, ভয়ের কিছু নেই। দুর্যোগ কাটিয়ে পাহাড় স্বাভাবিক।
দু-সপ্তাহ আগে প্রকৃতির রোষে তছনছ হয়ে গিয়েছে দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ। সেই তাণ্ডবের ক্ষত এখনও আছে। বালাসন নদীর ব্রিজ ভাঙায় মিরিক থেকে দুধিয়া হয়ে শিলিগুড়ি নামার রাস্তা বন্ধ। দার্জিলিংয়ের রোহিণী রোডও বন্ধ। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সিকিমের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের জন্য বন্ধ এখন। সংশ্লিষ্ট তিনটি রাস্তা বন্ধ থাকলেও ঘুরপথে পাহাড়ে আসছেন পর্যটকরা। ছন্দে ফিরছে শৈলশহর দার্জিলিং।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তা, ম্যাল রোড। কেউ মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে এসে চৌরাস্তায় বসছেন। আবার কেউ চিড়িয়াখানায় যাচ্ছেন। কেউ রাজভবন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বাসস্থান, ভানু ভবনে উঁকিঝুঁকি মারছেন। চকবাজার, ম্যাল রোডের ধারে পসরা সাজানো দোকানিদের থেকে কিনছেন পাহাড়ের সামগ্রী। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে হোটেলের সংখ্যা দেড় হাজার আর হোমস্টে শ-পাঁচেক। পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অনেকে ভেবে ছিলেন পাহাড় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। তবে ভয় কাটিয়ে পাহাড়ে ফের আসছেন তাঁরা। কিছুদিন আগেও ২০ শতাংশ ছিল। একসপ্তাহের মধ্যে এখন হোটেল, হোমস্টের বুকিং বেড়ে ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। দীপাবলিতে বুকিংয়ের সেই হার আরও বাড়বে বলেই আশা করছি।
দার্জিলিংয়ের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেজি লামা বলেন, বিপর্যয়ের সময় সামান্য কিছু পর্যটক ট্যুর বাতিল করেছিলেন। অধিকাংশই ট্যুর রিশিডিউল করেছেন। অর্থাৎ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের পরিবর্তে তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে ট্যুর করেছেন। সেসঙ্গে নতুন বুকিংও হচ্ছে। এমনটা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করছি। -নিজস্ব চিত্র