ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার নিয়ে দার্জিলিংয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে সরব মমতা
বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দার্জিলিং: ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার চলছেই। তা নিয়ে ফের সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলায় সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকলেও অন্য রাজ্যে তা হচ্ছে না। বাংলায় কথা বলার জন্য অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে। এমনকি, বাংলার মানুষ ভিনরাজ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে ওই রাজ্য কোনও দায়দায়িত্ব নিচ্ছে না। কিন্তু বাংলা কোনও ভেদাভেদ করেনি, করবেও না। এটা অন্যদের শেখা উচিত। এখানে তিনি দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন।
কর্মসূত্রে বাংলার প্রচুর মানুষ দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বইসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে। তাদের উপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চলছে বলে অভিযোগ। এদিন দার্জিলিংয়ের প্রশাসনিক সভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, একদা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একটাই রাষ্ট্র ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় দুটি দেশ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ হয়। এখন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিনটি পৃথক রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এখানে চলে আসেন তাঁরা ভারতীয়। তাঁদের ভাষা বাংলা। এখানে বিভিন্ন ধরনের বাংলা ভাষা রয়েছে। জলপাইগুড়ির ভাষা একরকম, বর্ধমান ও বীরভূমের ভাষা আর একরকম। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামেরটা আরএকটু অন্যরকম। ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাঙালিরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। কিন্তু অন্য রাজ্যের প্রচুর মানুষ বসবাস করছে বাংলায়। এখানে আমরা তো কাউকে অত্যাচার করি না। একেই বলে ইউনাইটেড বাংলা। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা বেশি রক্ত দিয়েছে। বাঙালিরা ফাঁসির কাঠে ঝুলেছেন। আন্দামানের সেলুলার জেলের মিউজিয়ামে সব উল্লেখ আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার মতো অবদান অন্যদের নেই।
ভিন রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষের কিছু উদাহরণও তুলে ধরেন মমতা। বলেন, দিল্লিতে বাংলায় চিঠি লেখার জন্য কয়েকজনকে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়। তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, এক গর্ভবতী মহিলাকে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে। সেই দেশের আদালত জানিয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশি নন। যে যার ভাষার কথা বলবেন, চিঠি লিখবেন, এটাই তো হওয়া উচিত। এটা বোঝার জন্য সরকারি কাজে বিভিন্ন ভাষার অফিসার রাখা হয়। তাহলেও ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার চলছে। যেসব পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে আসছেন, তাঁদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করছি। এজন্য কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছি। কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ করায় এটা করতে হয়েছে। কর্মশ্রী প্রকল্প ভালো মতো করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মমতা।
এরপরই ভিন রাজ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে অগ্নিকাণ্ডে বাংলার সাত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ওই শ্রমিকদের বাড়ি। তাঁদের বাড়িতে প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীবকুমার বলেন, মৃতদের পরিবারের সদস্যদের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। পরিবারের একজন করে সদস্যকে হোমগার্ডে চাকরি দেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, বাংলায় ভিন রাজ্যের কোনও শ্রমিক বিপদে পড়লে আমরা তাঁর পাশে দাঁড়াই। তাঁর সব দায়িত্ব নিই। গঙ্গাসাগরের মেলায় সকলের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে বিমা করা হয়। বাইরে থেকে আসা লোকদের জন্যও তা করা হয়। কিন্তু ভিন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের দায়দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে না। বাংলার কেউ দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কোনও রাজ্য সহযোগিতা করছে না।-নিজস্ব চিত্র