চাষে জল মেলে না, বর্ষায় বন্যা, ফরাক্কা বাঁধ রেখে লাভ কী: মুখ্যমন্ত্রী
বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
সুব্রত ধর, দার্জিলিং: শুখা মরশুমে চাষের জল মিলছে না। উলটে বর্ষাকালে লকগেট খুলে এলাকার পর এলাকাকে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে—কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ এনে ফরাক্কা বাঁধের ‘উপযোগিতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁধ রেখে লাভ কী—স্পষ্ট হুংকারও দিলেন তিনি। বুধবার জিটিএ’র সদর দপ্তর দার্জিলিংয়ের লালকুঠিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে দৃশ্যত বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহার রিপোর্ট দেখেছি। ফরাক্কায় বাঁধ দেওয়ার উদ্দেশ্য—গরমকালে শুখা এলাকায় ফিডার ক্যানেল দিয়ে চাষের জমিতে সেচের জল সরবরাহ করা। তা করা হচ্ছে না। উলটে বর্ষার মরশুমে লকগেট খুলে জল ছেড়ে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
মমতার অভিযোগ, ফরাক্কার জন্যই বাংলা-বিহার ভাসছে। এই পর্বেই তাঁর সংযোজন—ফরাক্কার মতোই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পাঞ্চেত, মাইথন জলাধারও ড্রেজিং করা হচ্ছে না। পলি জমে জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। ভুগতে হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গকে। যদি নিয়মিত ড্রেজিং করা না হয়, ফরাক্কার বাঁধ রেখে লাভ কী? দরকার নেই বাকি জলাধারেরও। ক্ষুব্ধ মমতার হুংকার— ‘ভেঙে দেওয়া হোক বাঁধ! স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া হোক নদীগুলিকে।’ এই পর্বেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানের বাঁধ এবং তিস্তা বাঁধে তৈরি সিকিমের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি নিয়েও সুর সপ্তমে তোলেন তিনি। সাফ বলেন, ‘প্রকৃতি নিয়ে খেলা বন্ধ হোক।’
প্রতিবেশী পাহাড়ি রাজ্য সিকিম নিয়ে এদিন বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরাখণ্ডের মতো সিকিমেও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘সিকিমে তিস্তা, রঙ্গিতে বিভিন্ন অংশ আটকে ১৪ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। ওরা বুঝতে পারছে না, ঠিক কী করছে! প্রকৃতিকে নিয়ে খেলা চলে না। এখন বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে। প্রকৃতিকে আঘাত করেছি, এখন প্রত্যাঘাত চলছে। যে কোনও সময় সিকিমে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। উত্তরাখণ্ডের মতো বিধ্বস্ত হতে পারে সিকিমও।’
দু’বছর আগেই হ্রদ বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত হয় সিকিম। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে বাংলার দুই জেলা কালিম্পং ও সমতলের জলপাইগুড়িতে। এখনও মাঝেমধ্যে কালিম্পংয়ে ধস হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিকিমের পাশেই কালিম্পং। সেখানে মাঝেমধ্যে ধস নামছে। কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে জিওলজিক্যাল সার্ভে করিয়েছি। কীভাবে ধস নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে সংক্রান্ত রিপোর্ট মিলবে এই সার্ভেতে। রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এদিন ফের ভুটানের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ভুটানের জল ঢোকা উত্তরবঙ্গে কমাতে হবে। ওদের জল যাতে না ঢোকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের বিপর্যয়ে সহযোগিতা করতে হবে ওদের। এই আবর্তেই ফের ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গঠন এবং সেখানে বাংলার প্রতিনিধি রাখার দাবি তোলেন মমতা।