• বামনডাঙার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রম অন্য চা বাগানের শ্রমিকদের
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: জল নামতেই  নাগরাকাটার বামনডাঙা মডেল ভিলেজের বিধ্বস্ত ছবি সামনে এসেছে। জলের তোড়ে কোনও বাড়ির দরজা-জানালা, দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। কোনওটির আবার ধসে পড়েছে দেওয়াল। হাতেগোনা যে ক’টি পাকাবাড়ি কোনওমতে টিকে রয়েছে, সেগুলির ভিতর কার্যত বুকসমান পলি-বালি। প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব বাড়িঘর সংস্কারে এগিয়ে এলেন ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা। বামনডাঙা মডেল ভিলেজে দুর্গত বাসিন্দাদের বেশিরভাগই চা শ্রমিক। তাঁদের দুর্দিনে ডুয়ার্সের অন্য বাগানের শ্রমিকরা পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাকে কুর্নিশ জানিয়েছে প্রশাসন। 

    নাগরাকাটার কলাবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক ঝরনা লাকড়া, শান্তি ওরাওঁ। বানারহাটের মোগলকাটা বাগানের বাসিন্দা শুকমিত ওরাওঁ। আপার চ্যাংমারি বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন বীরকুমার ওরাওঁ, কার্তিক ওরাওঁ। লালঝামেলা বস্তিতে থাকেন চা শ্রমিক অমিত ছেত্রী। বাগানের কাজ বন্ধ রেখে তাঁরা মডেল ভিলেজের দুর্গত বাসিন্দাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের কাজে শামিল হয়েছেন। 

    বুধবার পিকআপ ভ্যানে চেপে নাগরাকাটায় আসেন তাঁরা। ডায়না নদীর পাড়ে ভেঙে পড়া টানাটানি সেতুর কাছে গাড়ি থেকে নামেন। তারপর হেঁটে সেতু পেরিয়ে ওপারে গিয়ে ট্রাক্টরে চেপে পৌঁছন ৭ কিমি দূরে বামনডাঙা মডেল ভিলেজে। সন্ধ্যার আগেই আবার ফিরতে হবে, তাই সময় নষ্ট না করে কোদাল-বেলচা হাতে লেগে পড়েন দুর্গতদের ঘর থেকে বালি-পলি সরানোর কাজে। কেউ আবার হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুঁকে মেরামত করেন দরজা-জানালা। 

    বিপদের দিনে চা বাগানের শ্রমিকরা পাশে দাঁড়ানোয় খুশি মডেল ভিলেজের বাসিন্দা রাজেশ কাওয়ার, মণীষ টিগ্গারা। বললেন, আমরা প্রায় সবটাই হারিয়েছি। যতটুকু রক্ষে পেয়েছে, জল নামতেই সেগুলি মেরামতের চেষ্টা শুরু করেছি। ঘরের ভিতর বুক সমান পলি-বালি। একার পক্ষে এসব সরানো সম্ভব নয়। প্রশাসন তো আছেই, বিভিন্ন এলাকার বাগানের শ্রমিকরা এসে যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসার। 

    নাগরাকাটার বাসিন্দা চা শ্রমিক সিকান্দার মাঝি বলেন, আমরা নিজেরাও চা বাগানে কাজ করি। বামনডাঙা মডেল ভিলেজে দুর্গত বাসিন্দাদের বেশিরভাগই চা বাগানের শ্রমিক। বিপদের দিনে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে। 

    মডেল ভিলেজে পুনর্গঠনের কাজে শামিল হওয়া তিলক ছেত্রী, দিলকুমার ওরাওঁ বলেন, দুর্গত মানুষগুলো কতদিন ত্রাণশিবিরে পলিথিনের ছাউনির নীচে রাত কাটাবে? যে ক’টা ঘর রক্ষে পেয়েছে, পলি-বালি সরিয়ে মোটামুটি বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারলে, দুর্গতরা আপাতত সেখানে ফিরতে পারবেন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘর মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছে পুলিশ প্রশাসনও। বামনডাঙা হোক কিংবা ময়নাগুড়ির আমগুড়ি, সর্বত্র পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়াররা ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। 

     নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)