৩ বছর পেরিয়েছে, মেডিকেল থেকে চুরি যাওয়া শিশু এখনও উদ্ধার হয়নি
বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তানের জন্য চোখের জল মুছে চলেছেন মা। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার কিনারা হয়েছে। অথচ রামপুরহাট মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগ থেকে চুরি যাওয়া সন্তানকে ফিরে পাননি মুরারইয়ের বধূ লখি খাতুন। গ্রামবাসীরা বলছেন, দুঃস্থ পরিবার বলে পুলিশ শিশুটিকে খোঁজার ব্যাপারে সেভাবে তৎপরতা দেখায়নি। ২০২২সালের ২২ডিসেম্বর রামপুরহাট মেডিকেলের প্রসূতি বিভাগ থেকে ওই সদ্যোজাতকে চুরি করা হয়। মুরারইয়ের বাহাদুরপুর গ্রামের বধূ লখি বলেন, ওইদিন সকালে মা চা আনতে বাইরে গিয়েছিল। আমি শুয়েছিলাম। অচেনা ওই মহিলা কখন আমার পাশে এসে বসেছে বুঝতে পারিনি। মনে হয়, ওই মহিলা ছেলেকে চিমটি কেটে দিয়েছিল। সকারণে বাচ্চা কাঁদতে শুরু করে। তখন সে চুপ করানোর জন্য বাচ্চাকে কোলে নিতে চায়। আমি না বলার পরও সে বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যায়। সিজার হওয়ায় শরীর অত্যন্ত দুর্বল ছিল। জোরে চিৎকার করতে পারিনি। ওইদিন পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জাতীয় সড়ক অবরোধও করা হয়। অন ডিউটি চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাঁর সদ্যোজাতকে চুরি করে অনেক টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন শিশুর বাবা দিনমজুর রাজিবুল শেখ।
পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে, হাসপাতালের অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা বিকল। একটি ক্যামেরায় চোরের ছবি ধরা পড়লেও তা অস্পষ্ট ছিল। পরে সিআইডির শিল্পী এসে প্রসূতির মুখ থেকে চোরের চেহারার বর্ণনা শুনে ছবি আঁকেন। তারপর আর তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি। শিশুটির হদিশ পায়নি পুলিশ। কার্যত হতাশ ওই দম্পতি। সন্তানের জন্য নিত্যদিন চোখের জল ফেলে চলেছেন।
রাজিবুল বলেন, পুলিসের কোনও হেলদোল নেই। তিন বছরে মাত্র তিনবার রামপুরহাট থানায় ডেকেছিল। কিন্তু শিশুর কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। শুধু বলছে তদন্ত চলছে।
ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় এখনও কার্যত নিদ্রাহীন রাত কাটান মা। বুধবার তিনি জানান, বর্ধমান মেডিকেল থেকে চুরি যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশু উদ্ধারের পাশাপাশি দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কিন্তু আমরা দিনমজুর পরিবার হওয়ায় এখানকার পুলিশের কোনও তৎপরতা নেই। এর আগে হাওড়ার শালিমার স্টেশনে শিশু চুরি চক্রের এক দম্পতি ধরা পড়েছিল। উদ্ধার হয়েছে শিশু। আমার আশা, এখানকার পুলিশ তৎপর হলে একদিন আমিও সন্তানকে ফিরে পাব।
গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রাহুল শেখ বলেন, ছেলের জন্য পাগলের মতো অবস্থা হয়েছে ওই গৃহবধূর। যখনই দেখা হয় ছেলেকে পাওয়া গেল কি না জানতে চান। একদিন ফিরে পাবেন সেই সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিছুই বলতে পারি না। ওরা গরিব মানুষ হওয়ায় পুলিশও সেভাবে তৎপরতা দেখায়নি।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, শিশুটিকে উদ্ধারে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে প্রায় তিন বছর আগের ঘটনা। শিশুটি এখন বড় হয়ে গিয়েছে। মাও চিনতে পারবেন না। শিশুটি যদি উদ্ধারও হয় ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। -নিজস্ব চিত্র