• কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামে পড়ে নষ্ট হতে বসেছে বহু প্রাচীন পুঁথি, সংরক্ষণের দাবি বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: বৈষ্ণবচর্চার অন্যতম কেন্দ্র কাটোয়ায় একসময়ে রচিত হয়েছিল বহু বৈষ্ণব সাহিত্য। শ্রী চৈতন্যদেবের দীক্ষাস্থান কাটোয়া। প্রভুর নানা পার্ষদের নানা লীলাভূমি রয়েছে এই মহকুমায়। কেতুগ্রামে রয়েছে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজের জন্মভিটে, মহাপ্রভুর বিশ্রামতলা৷ কাটোয়াকে বৈষ্ণব সাহিত্যের পীঠস্থান বলা যেতে পারে। বৈষ্ণব সাহিত্যের শ’য়ে শ’য়ে প্রাচীন পুঁথি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড চিত্তরঞ্জন পাঠমন্দির গ্রন্থাগারে। তালপাতা, তুলোট কাগজে লেখা বৈষ্ণব সাহিত্যের সেইসব প্রাচীন পুঁথি আলমারির মাথায় তুলে রাখা হয়েছে। উইপোকায় কাটছে সেগুলি৷ পুঁথিগুলি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চিত্তরঞ্জন পাঠমন্দির গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সত্যিই এগুলি অমূল্য সম্পদ। পুঁথিগুলো যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট হব। জানা গিয়েছে, কাটোয়া-১ ব্লকের শ্রীখণ্ড গ্রামে রয়েছে গ্রামীণ গ্রন্থাগার। সেখানেই ওই দুষ্প্রাপ্য পুঁথিগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হতে বসেছে। শ্রীখণ্ড গ্রামে বহুকাল আগে থেকেই বৈষ্ণবচর্চা হয়ে আসছে। শ্রীচৈতন্য বা তার পরবর্তী কালে অনেক লেখকের পদধূলি পড়েছে শ্রীখণ্ডে গ্রামে। তাছাড়া এই গ্রামেই অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আগে গ্রামে সংস্কৃত চর্চার জন্য একটি  চতুস্পাঠিও তৈরি হয়েছিল। এখন সেই চতুম্পাঠি আর নেই। তবে সদানন্দ চতুম্পাঠির পুঁথিগুলি উদ্ধার করে শ্রীখণ্ড চিত্তরঞ্জন গ্রামীণ পাঠাগারে এনে রেখে দেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। সেসব পুঁথিগুলিই এখন নষ্ট হচ্ছে অবহেলায়। পুঁথিগুলি দু’-তিনশো বছরের প্রাচীন। ওইসব পুঁথি ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠতে পারে। সংস্কৃত ভাষায় বাংলা হরফে লেখা পুঁথি যেমন রয়েছে, তেমনি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত বহু পুঁথিও রয়েছে। শ্রীরূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, রঘুনাথ গোস্বামী, রঘুনাথ ভট্ট, রঘুনন্দন সরকার ঠাকুরের হাতে লেখা বহু পুঁথি রয়েছে। যাঁরা বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের কাছে এসব পুঁথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ সেন বলেন, আমরা চাই গ্রন্থাগার চত্বরেই ওই পুঁথিগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হোক। আমরা সবরকম সাহায্য করতে রাজি। একসময়ে বিভিন্ন মিউজিয়াম থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে দেখে যান প্রাচীন পুঁথিগুলি৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেকেই দেখে গিয়েছেন। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথি সংরক্ষণ বিভাগ প্রাথমিক ভাবে পুঁথিগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তারপর থেকেই  সেগুলি কাপড়ে মোড়া অবস্থায় পরে রয়েছে গ্রন্থাগারের আলমারিতে। এখন সেগুলিতে ধুলো জমছে, উইপোকায় কেটে নষ্ট করছে। শ্রীখণ্ড গ্রামের আরেক বাসিন্দা নিমাই বিলাস ঠাকুর বলেন, ওই পুঁথিগুলি দেশের অমূল্য সম্পদ। আমরা চাই গ্রন্থাগার সংস্কার করে এখানেই বৈষ্ণব সাহিত্যের একটি মিউজিয়াম গড়া হোক৷ তাহলে প্রাচীন পুঁথিগুলি অন্তত সেখানে সংরক্ষিত থাকবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)