সংবাদদাতা, কান্দি: বড় বোনের উচ্চতা কম হলেও বয়স বেশি। আর ছোট বোনের উচ্চতা বেশি হলেও বয়স কম। দীপান্বিতা অমাবস্যায় বড়ঞা ব্লকের পাঁচথুপি রাইজি জমিদারবাড়ির এই দুই বোনের পুজো ঘিরে এলাকার বাসিন্দারা উৎসবে মেতে ওঠেন। ওই জমিদারবাড়িতেই দুই বোনের প্রতিমা একসঙ্গে তৈরি করা হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে দুই বোনকে মুখোমুখি বসিয়ে সাতপাক ঘোরানো হয়।
জানা গিয়েছে, বড় বোন অর্থাৎ খেংরী মায়ের পুজো কয়েকশো বছরের প্রাচীন। গ্রামের আছুয়াপাড়ায় কংক্রিটের মন্দিরে এই পুজো হয়। আগে পুজোর সময় জমিদারবাড়ি থেকে হ্যাজাক, ঢাক-ঢোল ও ফলমূল পাঠানো হতো। পরে ওই বাড়ির তরফেই পুরো পুজোর দায়িত্ব নেওয়া হয়। একসময় ওই এলাকায় সাধুসন্ন্যাসীরা তপস্যা করতেন। নিকটে কোনও শ্মশান থাকায় খেংরী মাকে শ্মশানকালীও বলা হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোয় এখানে অসংখ্য ছাগবলি দেওয়া হয়।
আবার, বর্ধমান রাজবাড়ি থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছোট বোনকে এখানে আনা হয়েছিল। এই দেবী বড়মা নামেই পরিচিত। গ্রামের কালীসাগরের পশ্চিমপাড়ে পাঁচথুপি বাজার এলাকায় বড়মার ছাদহীন কংক্রিটের মন্দির রয়েছে। এই পুজোয় ১০টি বলি দিতে হয়। তার মধ্যে আটটি ছাগল, একটি মহিষ ও একটি ভেড়া।
বিসর্জনের সময় বড় বোন খেংরী মাকে ছোট বোনের কাছে আনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুখেন বাগদি বলেন, সেসময় মহিলারা উলুধ্বনি দেন, সিঁদুর খেলেন। এই মুহূর্তকে ‘সংযোগ’ বলা হয়। দুই বোনকে পাশাপাশি রেখে সাত পাক ঘোরানোর পর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়। প্রথমে বড়মাকে কালীসাগরে বিসর্জন করা হয়। পরে শোভাযাত্রা শেষে খেংরী মায়ের বিসর্জন হয়।
এই পুজোর সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। বহু দূর থেকে দর্শনার্থীরা বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় জমান। জমিদারবাড়ির পুষ্পিতা সিংহ বলেন, বিয়ের পর থেকেই দুই বোনের মিলন দেখে আসছি। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী খেংরী মায়ের কংক্রিটের মন্দির হয়েছে। আর বড়মার মন্দিরে ছাদ দেওয়া যায় না। ওই বাড়ির অপর সদস্য সেবাশিস সিংহ বলেন, দু’টি পুজোই আমাদের বাড়ি থেকে করা হয়। খেংরী মা প্রথমে এসেছিলেন। পরে বড়মার পুজো শুরু হয়। তাই খেংরী মাকে বড় বোন ও বড়মাকে ছোট বোন । নিজস্ব চিত্র