• তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনির মঞ্চে অশ্লীল নাচ, লজ্জা পেয়ে নেমেই গেলেন বিধায়ক
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কান্দি: তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনির মঞ্চে অশালীন নাচ লজ্জায় ফেলে দিল বিধায়ককেও। থাকতে না পেরে লজ্জায় মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। আর তারপর ঘণ্টাভর বিশৃঙ্খলায় রাস্তা অবরুদ্ধ নাজেহাল হতে হল বাসিন্দাদের। আটকে গেল অসুস্থ রোগীর গাড়ি। ভরতপুর থানার কাঞ্চনগড়িয়া গ্রামের ওই মঞ্চে উঠে ভরতপুর থানার ওসি মাইক্রোফোন হাতে ধরে গাড়ি পাশ করালেন। মঙ্গলবার রাতে এইসব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন স্থানীয়রা।

    এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তৃণমূলের ওই কর্মসূচি শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত। সেখানে মূল বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। সভায় হাজির দর্শকরা আঁচ পেয়েছিলেন, বরাবরের মতো এদিনও বিধায়ক চড়া মেজাজে আক্রমণ শানাবেন। বাস্তবে সেটাই হয়। মাইক্রোফোন ধরে তৃণমূলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারকে পরপর হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন হুমায়ুন কবীর। বিধায়ক বলেন, পিছন থেকে লোক লাগিয়ে আমার কর্মীদের সম্মিলনিতে আসতে বাধা দিয়েছ, কর্মীদের শাসাচ্ছ। আমার লেজে পা দিতে এলে বহরমপুরে মাথা ভেঙে চুরমার করে দেব। আমাকে বেশি কচলালে, ধমকালে, চটকালে আমার সামনে এসপি, ডিএমকে নস্যির মতো টানব আর আর ছুড়ে ফেলে দেব। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেব। বিধায়কের এই বক্তব্য স্বাভাবিক ভাবে হাততালি কুড়োয়। তবে এরপর যা ঘটে তা অস্বাভাবিক। বিজয়া সম্মিলনির মঞ্চ থেকেই বারবার মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল যে, বীরভূমের ইউটিউবার সফিকের প্রোগ্রাম রয়েছে। তারা এই এসে পড়ল বলে। সেই ঘোষণা হতেই ভিড় জমতে শুরু করে। বিজয়া সম্মিলনির শেষের দিকে সভাস্থল রীতিমতো বেসামাল হয়ে পড়ে। পুলিশের পক্ষেও তা সামাল দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

    এরপর ওই ইউটিউবারের অনুষ্ঠান শুরু হতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশকেও অসহায় দেখায়। এই অনুষ্ঠানের শুরুতে বিধায়ক মঞ্চেই ছিলেন। তাঁর সামনেই এক তরুণী চটুল নাচ শুরু করেন। তরুণীর অঙ্গভঙ্গিতে বিধায়কও লজ্জায় পড়ে মঞ্চ থেকে নেমে বাড়ির দিকে রওনা দেন।

    এরপর শুরু হয় আরও বিশৃঙ্খলা। ভরতপুর লোহাদহ গ্রামীণ সড়ক পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একটা সময় ভরতপুর ওসি শিবনাথ মণ্ডল মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন ধরে পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাস্তায় একটি গাড়ি আটকে গিয়েছে। তাতে একটি অসুস্থ ছোট মেয়ে রয়েছে। আপনারা গাড়িটিকে পাশ করে দিন।

    এরপরও বিশৃঙ্খলা থামানো যায়নি। পরে কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এনিয়ে বিধায়ক বলেন, অনুষ্ঠানে চটুল নাচ হবে সেটা আমিও জানতাম না। তাই লজ্জায় নেমে চলে এসেছি। তবে এরজন্য আয়োজকদের কাউকে ছাড়িনি। দলের জেলা সভাপতি প্রসঙ্গে বলেন, আমার পিছনে কেউ লাগলে আমিও ছেড়ে কথা বলব না।

    তৃণমূলের এমন কাণ্ডে এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, শাসকদলের এই নেতৃত্ব অশালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের লজ্জায় মাথা নত করা ছাড়া কিছুই করার নেই। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা শ্রমিক সংঠনের সহসভাপতি আব্দুল বারি বলেন, এদিন সকাল থেকে মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। জেলা সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, ওঁর কথা ছাড়ুন তো।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)