নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: স্বপ্নাদেশের পর মা কালীকে খুঁজতে এক ব্যক্তির কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। বহু চেষ্টার পরে দেওয়াল খুঁড়েই মিলেছিল মা কালীর প্রতীক চিহ্ন। পরবর্তী সময়ে চুন সুরকির দেওয়ালে মায়ের মূর্তি তৈরি হয় ঠিকই। কিন্তু বহু প্রাচীন ভগ্নদশায় পরিণত হওয়া দেওয়াল থেকে আজও মায়ের মূর্তিকে আলাদা করতে পারেনি কেউ। গল্পটা মেদিনীপুর শহরের কাঁথ কালীর পুজোকে ঘিরে। এবছরও ধুমধাম করে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শহরের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় চারশো বছরের পুরোনো এই দেওয়ালে মায়ের মূর্তি ও প্রতীক চিহ্ন রয়েছে। বহু চেষ্টা করেও মন্দিরের সংস্কার ও দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তি সরানো যায়নি। এখনও প্রাচীন রীতি অনুসারে বলি প্রথা মেনে চলা হয়। একইসঙ্গে পুজো হয় তান্ত্রিক মতে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুমনজিৎ দে, জয়দেব দাস প্রমুখ বলেন, মা খুবই জাগ্রত। দেওয়ালের উপর খরিশ সাপ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই প্রাচীন দেওয়াল থেকে মূর্তি সরানো যায়নি। একসময় এক ব্যক্তি দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তি সরানোর কথা বলেন। কিছু সময় বাদেই সেই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুরে প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম কাঁথ কালীর পুজো। বহু বছরের পুজো হলেও জৌলুস হারায়নি। জনশ্রুতি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবারের নুনগোলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর বেশ নামডাক ছিল। একসময় তাঁর সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান মুখোপাধ্যায় পরিবার। সেই সময় নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নে এসে স্বয়ং দক্ষিণা কালী মা দেখা দেন। স্বপ্নাদেশে তিনি জানতে পারেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরের মীর বাজারে দক্ষিণাকালী রয়েছেন। তিনি আর সময় নষ্ট করেননি। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। এরপর সটান পৌঁছে যান মীরবাজার এলাকায়। সেখানে পৌঁছে তিনি লক্ষ্য করেন বট গাছের নিচে কয়েকজন তান্ত্রিক বসে সাধনা করছেন। আর সেখানেই রয়েছে প্রায় ভগ্ন এক দেওয়াল। সেই দেওয়াল দেখে তাঁর মনে সন্দেহ জাগে। এরপর দেবীর দর্শন পাওয়ার আশায় সেখানেই দেওয়াল খোঁড়া শুরু করেন তিনি। অবশেষে দেওয়াল খুঁড়তে খুঁড়তে দেবীর স্বস্তিক চিহ্ন, দেবীর খাড়া দেখা যায়। এছাড়া দেখা যায় শিবের পায়ের চিহ্নও। এরপর আর সময় নষ্ট করেননি নন্দগোপালবাবু। সেখানেই মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। পরবর্তী সময়ে দেওয়ালে তৈরি হয় মা কালীর মূর্তি। এই এলাকার বাসিন্দা আশিস কুমার মণ্ডল বলেন, এই এলাকার সকলেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সাধারণ মানুষের জন্য ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থাও থাকে।-নিজস্ব চিত্র