দুর্গাপুজো শেষ হতেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট প্রস্তুতি তুঙ্গে। আগামী সপ্তাহে কালীপুজো ও ভাইফোঁটা শেষ হলেই নভেম্বরের গোড়া থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজনৈতিক ময়দানে নামার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের নির্বাচনী ইস্যুতে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে চলেছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর।
কারণ নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন সম্ভবত ২ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। সেই দিনেই বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে এবং সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় শাসকদলের রাজনৈতিক কৌশলের কোনও পরিবর্তন না হলে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ সভা ডাকার কথা ভাবছেন। তবে এখনও এ ব্যাপারে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ছাড়াও বিরোধী দলগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য নতুন ও বৈধ ভোটার সংযোজন নয়, বরং নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাব কমানো। কংগ্রেস, বাম ও তৃণমূলের মতে, এতে গরিব, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিপদে পড়তে পারে।
শাসকদল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, তৃণমূল ভোটার তালিকা সংশোধনকে বাংলার গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের ষড়যন্ত্র হিসাবে তুলে ধরতে পারে। ফলে দলের সম্ভাব্য রাজনৈতিক বার্তা হবে, গত চার বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করার পাশাপাশি এবার ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছেন, প্রায় এক কোটি পঁচিশ লক্ষ ভোটারের নাম বর্তমান ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতে, অন্তত এক কোটি ভোটারের নাম বাদ হবে। কারণ বাংলার ভোটার তালিকায় অগণিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে।
তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, সংশোধনের পূর্বেই এই সংখ্যাটা কীভাবে জানা গেল? এতে ধরা পড়ছে যে, ভোটার তালিকায় বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও কিছু পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন কার্যত কেন্দ্রের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ আদালতের সংবিধান বেঞ্চ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে ২০২৩ সালে আইন পাশের মাধ্যমে কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার আরও একজন মন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাকে রাখার বিধান দেওয়া হয়। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, এর ফলে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জ্ঞানেশ কুমারকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের সময় থেকেই এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তাঁর নেতৃত্বে এখন এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিহারে এই ইস্যু নিয়ে তুমুল বিতর্কের পর এখন দেখার বিষয়, পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন কতদূর রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।