রাজ্য ত্রাণ তহবিলে মমতার ৫ লক্ষ, এক লক্ষ করে দেবেন মন্ত্রীরাও
প্রতিদিন | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ টাকা করে দান করছেন। উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ টাকার ত্রাণ তহবিলে দানের ঘোষণা করেছেন। একে তৃণমূলের তরফ থেকে কেন্দ্র ও কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতি একটি বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে যে, রাজ্য সরকার সর্বদা দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছে। এছাড়া, ত্রাণ তহবিলে অর্থদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যবাসীর কাছেও আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে সাড়া দিয়ে বহু মানুষ তহবিলে অর্থ দান করেছেন। ক্যামেলিয়া গ্রুপের কর্ণধার নীলরতন দত্ত ১০ লক্ষ টাকা এই তহবিলে জমা দিয়েছেন।
বুধবার দার্জিলিংয়ের লালকুঠিতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের বিশেষ ত্রাণ তহবিলে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, তাঁর লেখা বইয়ের রয়্যালটি এবং গানের সিডি থেকে তিনি যেটুকু অর্থ পান, সেই অল্প টাকা থেকেই তিনি ৫ লক্ষ টাকা দেবেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আমাকে জানিয়েছেন যে রাজ্যের মন্ত্রীরাও ওই তহবিলে অর্থ দিতে চান।” অর্থাৎ, রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ টাকা করে দেবেন।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী যখন বারবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বলছেন যে, উত্তরবঙ্গে এতবড় প্রকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য দিচ্ছে না এবং রাজ্য নিজের কোষাগার থেকেই ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ করে চলেছে, সেই সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের মন্ত্রীরাও এগিয়ে এলেন ত্রাণ তহবিলে দান করার জন্য। কারণ, বিপর্যয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৩২ জন মানুষ মারা গিয়েছে। কৃষিজমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছে। তাঁরা এখনও ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। সেতু ভেঙে গিয়েছে। এই সব পুনর্গঠন করতে হবে। সেই জন্যই বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কেন্দ্র বাংলার বিপর্যয় থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও রাজ্য সরকারকেই এই কাজগুলি করতে হচ্ছে।
এদিন, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ে পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিপর্যয়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জন দার্জিলিংয়ের, ৯ জন নাগরাকাটার এবং ২ জন মাথাভাঙায়। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বিপর্যয়ের আগে প্রশাসন ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেটি না করা গেলে আরও বেশি প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তিনি বলেন, “সমালোচনা করলেই হয় না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়।” বিপর্যয়ে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণের কাজ চলছে এবং আরও চলবে। বিধ্বস্ত এলাকাগুলি দ্রুত পুনর্গঠনের কাজ চলছে।
এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে একটি পয়সাও পাইনি। তার মধ্যেই সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কোনও টাকা না পেলেও এমন পরিস্থিতি সামলে উঠেছি কারণ মানুষের ভালোবাসা পেলে সব হয়।”এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিপর্যয়ে ৩২ জন মৃতের পরিবারকেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তিনি দু’টি তথ্য জানান, অতিবর্ষণে কলকাতার ১০ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে দুজন মারা গিয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের হাতেও চাকরি কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে। আগামিকাল, শুক্রবার কলকাতার শেকসপিয়র সরণির একটি কালীপুজার মণ্ডপ থেকে তাঁদের হাতে চাকরির কাগজ দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, যে সাত জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক বেঙ্গালুরুতে মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকেও চাকরি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।