রাজ্যের উন্নয়নে একগুচ্ছ পদক্ষেপ, নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার
আজকাল | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
নিতাই দে, আগরতলা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. মানিক সাহা। বুধবার ত্রিপুরা রাজ্যের চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন তিনি এবং এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্রের সহায়তা কামনা করেন।
সাক্ষাৎ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'আজ নয়াদিল্লিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘বিকশিত ত্রিপুরা, বিকশিত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সরকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজ্যের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি এবং উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলিতে তাঁর সহৃদয় সহায়তা প্রার্থনা করেছি।' মুখ্যমন্ত্রী জানান, এনএফএসএ স্কিমের অধীনে ব্রু-রিয়াং সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি, পিডিএসের গম বরাদ্দ বৃদ্ধি, রাজ্যে রেলপথের ডাবল লাইন, আগরতলা–গুয়াহাটি রুটে বন্দে ভারত ট্রেন চালু, এক্সটার্নালি এইডেড প্রজেক্টগুলির (EAPs) সিলিং সীমা বৃদ্ধি, ইএমআরএস স্কুলের সংখ্যা ১৫-তে উন্নীতকরণ, আগর বোর্ড ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং উনকোটিকে ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ড. সাহা এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ত্রিপুরার চলমান উন্নয়ন প্রকল্প এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'ত্রিপুরার উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবিরাম নির্দেশনা ও অটল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।' মুখ্যমন্ত্রী এই দিন ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নয়ন করার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে নয়াদিল্লির রেল ভবনে রেলওয়ে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. মানিক সাহা।
এই সাক্ষাতে বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা, ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা এবং সাইবার সিকিউরিটি হাব স্থাপন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় বলে সামাজিক মাধ্যমে জানান, 'নয়াদিল্লির রেল ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাথে সাক্ষাত করি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'বিকশিত ত্রিপুরা, বিকশিত ভারত' গড়ে তোলার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিশায় আমরা বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছি। আগরতলা - গুয়াহাটির মধ্যে বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা, রেলওয়ে ট্র্যাক ডাবল করা, বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করা, দীর্ঘ দূরত্বের রুটে নতুন এবং উন্নত মানের কোচ এবং রেলওয়ে স্টেশনগুলিকে সুন্দর রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। এর পাশাপাশি টিএফটিআই এর জন্য নতুন বিল্ডিং ও ফিল্ম সিটির উন্নয়ন করা, কল সেন্টারগুলির উন্নয়ন করা এবং সাইবার সুরক্ষা হাব গড়ে তোলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।'
অন্যদিকে বুধবার ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও শক্তিশালী করা এবং রাজ্যের জনগণকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর এবং নয়া দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে (AIIMS)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। নয়া দিল্লির ত্রিপুরা ভবনে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর কার্য্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. মানিক সাহা, ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগন সহ এইমস দিল্লির ডিরেক্টর ড. এম. শ্রীনিবাস। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ সহ রাজ্য ও জেলা স্তরের হাসপাতালগুলিকে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং সুপার স্পেশালিটি পরিষেবার উৎকর্ষ কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।'
তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও জিবি পন্থ হাসপাতালকে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন একটি মেডিক্যাল হাবে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যা নয়া দিল্লির এইমসের মডেলে গড়ে তোলা হবে এবং এআইআইএমএস একটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যা মেডিক্যাল এডুকেশন, গবেষণা ও উন্নত রোগী পরিষেবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার জন্য সুপরিচিত।
তিনি আরও যোগ করেন, ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর ও এআইআইএমএস, নয়া দিল্লির মধ্যে এই সহযোগিতা রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণমান ও পরিসর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আজ মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের ফিরে আসার কথা রয়েছে।