প্রসেনজিত্ সরদার: ছেলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর বাহিনীতে কর্মরত। সেই ছেলের বিরুদ্ধে বাবা-মাকে বেধড়ক মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো বিএসএফ কর্মী দেবাশীষ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ঘটনা নিয়ে সুন্দরবন ঝড়খালি কোষ্টাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্ত দম্পতি।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি কোষ্টাল থানার অন্তর্গত নফরগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিরিঞ্চীবাড়ি এলাকার জানা পাড়া। সেখানেই বসবাস করেন নিমাই চন্দ্র মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী কবিতা মণ্ডল। পেশায় ক্ষেতমজুর দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে দেবাশীষ মণ্ডল বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার। দম্পতির একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমা ব্যাঙ্গালোরে নার্স হিসেব কর্মরত। ঝড়খালি এলাকায় নিজের ভিটেতে বছর দুই আগে বাড়ি তৈরী করেন ওই বিএসএফ অফিসার। একবছর আগে উত্তর প্রদেশের প্রতিমা যাদব(মণ্ডল) এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
অভিযোগ, দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে নিজের বাবা-মায়ের উপরে অত্যাচার শুরু করে আসছেন সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য। এমনকি সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। না লিখে দেওয়ায় বৃদ্ধ দম্পতিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গত প্রায় ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন দেবাশীষ। অভিযোগ বাড়িতে ফিরেই আবারও লাগামছাড়া অত্যচার শুরু করেন নিজের বাবা-মায়ের উপরে। রাতে বৃদ্ধ দম্পতিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম দম্পতিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায় মেয়ে পূর্ণিমা। অভিযোগ তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। কোন প্রকারে বাবা-মা কে উদ্ধার করেন মেয়ে। চিকিৎসার জন্য তাদের বাসন্তী ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দম্পতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ দম্পতি।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিএসএফ অফিসার ছেলের হাতে আক্রান্ত মা কবিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে দেবাশীষ। সম্পত্তি লিখে দেওয়া হয়নি। সে কারণে আমার ও আমার স্বামীকে এমনকি মেয়েকেও বেধড়ক মারধর করে। এটা প্রায় এক বছরের বেশি সময় চলছে। রাতে আবারও লাঠি দিয়ে তলপেটে,ঘাড়ে ও পায়ের তলায় মারে। থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। ওর যেন চরম তম শাস্তি হয়। ’
অন্যদিকে ছেলের হাতে আক্রান্ত বৃদ্ধ নিমাই চন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন,‘ছেলের অত্যাচারে জর্জরিত, আর সহ্য করতে পারছি না। ওর যেন চরম শাস্তি হয়। ’
পূর্ণিমা মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘দাদা প্রতিনিয়ত বাবা-মায়ের উপরে অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে, এমনকি আমিও রেহাই পাচ্ছি না। যে সন্তান দেশ মাতৃকা কে সুরক্ষিত রাখার জন্য কাজ করছেন, তাঁর কাছে নিজের পরিবার সুরক্ষিত নয়। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর লাগামছাড়া অত্যাচার চালাচ্ছে।আমি আমার দাদার চরম শাস্তি চাই।’
অন্যদিকে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ,সেই বিএসএফ অফিসারের সাথে ফোনে যোগাযোগা করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এছাড়াও অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ঝড়খালি কোষ্টাল থানার পুলিস।