রাস্তা আটকে চলছিল কালীপুজোর চাঁদা আদায়। ফিরতি পথে চাঁদা দেওয়ার কথা বলায় এক সেনাকর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের সিউড়ি শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাগান এলাকায়, মূল রাস্তার উপরে। এক অভিযুক্তকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন পুজো কমিটির এক সদস্য।
আহত সেনাকর্মী গোপীনাথ বল জানান, এ দিন তিনি সপরিবার দুবরাজপুরে, নিজের বাড়ি থেকে ৭ মাসের ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে দেখাতে সিউড়ি আসছিলেন। অটোয় তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও মা ছিলেন। বড়বাগানে ১০-১২ জন নাবালক ও যুবক চাঁদা চেয়ে তাঁদের অটো আটকায়। তিনি তাঁদের জানান, ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফেরার পথে চাঁদা দেবেন। গোপীনাথের দাবি, ওই ছেলেরা পথ ছাড়েনি। তাঁর স্ত্রীকে গালিগালাজও করে।
ওই সেনাকর্মীর অভিযোগ, এক কিশোরকে তিনি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই ১০-১২ জন এক সঙ্গে তাঁর উপরে চড়াও হয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করে। তাঁর স্ত্রীর গায়েও আঘাত লেগেছে, এমনকি ৭ মাসের শিশুকেও তারা মারতে গিয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ। গোপীনাথ বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর মোবাইলও ভেঙে দেয় ক্লাবের সদস্যরা৷ পুলিশকে ফোন করি।’’ ঘটনার কথা শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে সিউড়ি থানার পুলিশ। পুলিশকে দেখে চাঁদা আদায়কারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে, পাড়ায় ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এক যুবককে আটক করেছে।
আক্রান্ত সেনাকর্মীর স্ত্রী চৈতি দত্ত বলেন, “আমরা চাঁদা দেব না বলিনি। শুধু বলেছিলাম, চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার তাড়া আছে, তাই ফেরার পথে দেব। কিন্তু, ওরা কোনও ভাবেই ছাড়ছিল না। আমার স্বামীকে প্রচণ্ড মেরেছে, আমাকেও মেরেছে।” প্রত্যক্ষদর্শী এক টোটোচালকের দাবি, “এই রাস্তায় চাঁদার জুলুম বহু বছর ধরে চলছে। এ দিনও ওই দাদা (সেনা কর্মী) ভাল করে কথা বলছিলেন চাঁদা আদায়কারীদের সঙ্গে। কিন্তু, ওরা তাঁর স্ত্রীকে খারাপ ভাষায় কথা বলার পরে দাদা অটো থেকে নেমে এক জনকে ঠেলে দেয়। তার পরেই ওরা এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। এই জুলুম বন্ধ হওয়া দরকার।”
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি অনিল দাস বলেন, “আমি খবর পেয়েই এলাকায় আসি৷ যা হয়েছে, খুবই অন্যায় হয়েছে। আমি চাই, অপরাধীদের শাস্তি হোক। রাস্তার উপরে চাঁদা তোলাও বন্ধ হওয়া দরকার।” পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত দম্পতি সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁদের শনাক্তকরণের ভিত্তিতেই এক যুবককে আটক করব হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের খোঁজ চলছে। যে পুজোর চাঁদা ঘিরে এত কাণ্ড, সেই পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য মাধব দত্ত বলেন, "আমরা গোটা ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। ১৯৯৩ সাল থেকে এই পুজো হচ্ছে। কখনও এমন অভিযোগ ওঠেনি৷ আমরাও চাই, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের শাস্তি হোক। পুলিশের তদন্তে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।’’