• এলেনই না ‘নিরি’ বা দূষণ পর্ষদের কোনও প্রতিনিধি, বাজি পরীক্ষা বাতিল এ বারেও
    আনন্দবাজার | ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • মাঠের এক কোণে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সেখানে হাজির পুলিশ এবং দমকলের কর্মীরা। রকমারি বাজি নিয়ে পরীক্ষা করাতে চলে এসেছেন ব্যবসায়ীরাও। বাজি পরীক্ষার সময়ে অঘটন ঠেকাতে দমকলের গাড়িতে পর্যাপ্ত জল মজুত আছে কিনা, তা-ও জেনে নিয়েছেন দমকলের আধিকারিকেরা। বুধবার এত সব আয়োজনের পরেও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর কোনও প্রতিনিধি না-আসায় এ বছরও হল না বাজির পরীক্ষা। এ দিন টালা পার্কে ঘণ্টা দুই অপেক্ষার পরে বাজিপরীক্ষা বাতিল করেই ফিরে যানপুলিশ এবং দমকলের আধিকারিকেরা। গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র জেরে এবং পর্ষদ ও নিরি-র প্রতিনিধিরা না আসায় বাজি পরীক্ষা না করেই পুলিশকে ফিরে যেতে হয়েছিল। এ বছরও সেই পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এই সুযোগে বেআইনি বাজির রমরমা বাড়লে তার দায় কার?

    এ বছর ১৪ অক্টোবর থেকে বাজি বাজার বসে গেলেও বাজি পরীক্ষা না হওয়ায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। শেষমেশ পুলিশেরতরফে জানানো হয়, এ দিন টালা পার্কে বাজি পরীক্ষা করা হবে। সেই মতো সমস্ত আয়োজনও করা হয়েছিল।টালা পার্ক, বেহালা, কালিকাপুর, শহিদ মিনার— শহরের এই চারটিবাজি বাজারের প্রতিনিধিরা প্রায় ৩৩ রকমের বাজি নিয়ে এসেছিলেন পরীক্ষার জন্য। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরেও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অথবা নিরি-র কোনও প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হননি। প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ১টা নাগাদ পুলিশকর্তারা মাঠ ছেড়ে চলে যান। যাওয়ার আগে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ইমেল করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং নিরি-কে বাজি পরীক্ষার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউই আসেননি। আমরা অনেক ক্ষণ অপেক্ষায় ছিলাম।কেউ না আসায় পরীক্ষা বাতিল হল।’’ ওই পুলিশকর্তা আরও বলেন, ‘‘আমরা তো এখানে আয়োজক। কিন্তু যাঁরা পরীক্ষা করবেন, তাঁরাই যদিনা আসেন, তা হলে তো কিছু করার থাকে না।’’

    টালার বাজি বাজারের অন্যতম উদ্যোক্তা শুভঙ্কর মান্না এ দিন বললেন, ‘‘আমাদের তরফে যা যা করণীয়, সবই করেছি। যে কোনও বাজার থেকে যখন খুশি বাজি নিয়ে এসে পরীক্ষা করতে পারেন। আমরা নিশ্চিত, শব্দের নির্ধারিত মাত্রা ছাড়াবে না। কিন্তু যাঁদের পরীক্ষা করার কথা, তাঁরা কেউ না আসায় এ নিয়ে হয়তো সংশয় থেকে গেল।’’

    কিন্তু রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং নিরি-র কোনও প্রতিনিধি এ দিন এলেন না কেন? রাজ্য দূষণনিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, তারা পুলিশের ইমেল পায়নি। সেই সঙ্গেই তাদেরদাবি, বিক্রিযোগ্য বাজি আদৌ সবুজ বাজি কিনা, তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব ‘নিরি’ এবং ‘পেসো’র। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বললেন, ‘‘আমরা এমন কোনও আমন্ত্রণ পাইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও বাজি শব্দমাত্রা ছাড়াচ্ছে কিনা, তা পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পরীক্ষাগার আছে। মাঠ বা কোনও খোলা জায়গায় শব্দের পরীক্ষা সম্ভব নয়। হলদিয়ায় এর জন্য আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশকেও একাধিক বার এ বিষয়ে আমরা জানিয়েছি। পুলিশ চাইলে যে কোনও সময়ে হলদিয়ায় গিয়ে বাজির শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করাতে পারে।’’

    নিরি-র এক কর্তা আর জে কৃপাদম জানান, কলকাতা পুলিশের চিঠি বা ইমেলের কথা তাঁর জানা নেই। অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, ‘‘খোলা আকাশের নীচে বাজি পরীক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন রয়েছে। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানতে হয়। আমাদের পরীক্ষাগারে এই ধরনের পরীক্ষা হয়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)