বিধান সরকার: সামনেই দীপাবলি (Diwali 2025)। এদিন অন্ধকার রাত্রি আলোকিত হয় আলোয় আলোয়। এই সময়ে গ্রামবাংলার বহু জায়গায় কালীপুজো হয়। থাকে তার নিজস্ব ইতিহাস। তেমনই এক কালী শেওড়াফুলির কালী। শেওড়াফুলির (Sheoraphuli) নিস্তারিণী কালী খুবই জাগ্রত বলে বিশ্বাস ভক্তদের। তাই সারা বছর পুজো দিতে ভিড় জমে এখানে Nistarini Kali Mandir Sheoraphuli। তবে সব থেকে বেশি ভিড় হয় দীপান্বিতা আমাবস্যার পুজোয়।
ইতিহাস বলে
রাজা হরিশচন্দ্র রায় নিস্তারিণী কালী প্রতিষ্ঠা করেন। জনশ্রুতি, হরিশচন্দ্রের তিন স্ত্রী ছিলেন। নিত্যদিন সাংসারিক অশান্তি হত তাঁদের। প্রথম স্ত্রীর অপঘাতে মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন রাজা হরিশচন্দ্র দত্ত রায়। তাঁর মধ্যে পাপবোধ জন্মায়। তা থেকে নিস্তার পেতে তিনি নিস্তারিণী কালী পুজো শুরু করেন ১৮২৮ সালে। বর্ধমানের পাশাপাশি শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি অঞ্চলে রাজার অনেক সম্পত্তি ছিল। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে রাজা গঙ্গা থেকে পাওয়া কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরী করান এই কালী মূর্তি। শেওড়াফুলিতে গঙ্গার পারে মন্দির স্থাপন করে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণাকালীর।
সর্বমঙ্গলাই নিস্তারিণী
দেবীর অধিষ্ঠান পঞ্চমুন্ডির আসনে। মন্দিরে কোনও ঘট নেই। দেবীর হাতে রয়েছে তরবারি, যা আজও রাজ পরিবারের স্মারক বহন করে চলেছে। রাজা হরিশচন্দ্রের বড় রানির নাম ছিল সর্বমঙ্গলা। ধারণা রয়েছে, মন্দিরে সেই বড় রানিকেই দেবীর রূপ দিয়েছিলেন রাজা। সারা বছর নিস্তারিণী মন্দিরে পুজো হয়। প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ পুজোপাঠ ও ছাগবলি দেওয়া হয়। কৌশিকী আমাবস্যার রাতেও বিশেষ পুজো হয় এ মন্দিরে।
দীপাবলিতে নিস্তারিণী
আর কালী পুজোর সময় সারাদিন ধরে এখানে চলে পুজো, হোম যজ্ঞ, চন্ডীপাঠ। সারারাত পুজো, পরদিন হয় ভোগ বিতরণ। এই পুজোয় জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন মন্দিরে। নিস্তারিণী মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস ভক্তদের। আজও সেই বিশ্বাসের টানে দূর দূর থেকে নিস্তারিণী মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তরা। মন্দিরের সেবাইত ও পুরোহিতরা জানান,মায়ের কাছে অনেকেই মানসিক করেন। রাতে পুজো শুরু হয়, শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যায়। মায়ের ভোগে দেওয়া হয় লুচি, সাত রকম ভাজা, ছানা, নানা রকম মিষ্টি ও পায়েস।