অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: দলের বিজয়া সম্মিলনীতে নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বিএলওদের উপস্থিত করানোই নয়, তাঁদের সঙ্গে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের রীতিমতো পরিচয় করানো হল! তৃণমূলের অনুষ্ঠানের বিষয়টি সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হল খড়গপুর জুড়ে। বিতর্কের কেন্দ্রে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলে সহ-সভাপতি তথা খড়গপুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী। দলীয় নেতার কীর্তি নিয়ে মুখ খুলেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও। এনিয়ে রাজনৈতিক মহলও নানা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।
ঘটনা বুধবার সন্ধ্যার। খড়গপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি বিজয়া সম্মিলনী আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানটি হয়েছে শহরের মালঞ্চ রোডের ধারে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের হিতকারিণী হাই স্কুল চত্বরে। সেই সভায় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আটটি বুথের নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বিএলওদের উপস্থিত করানো হয়। তাঁদের সঙ্গে সকলকে পরিচয় করান তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরী, যা নিয়ে এত বিতর্ক। একথা জানাজানি হতেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। এমনকী শাসকদলের নেতারাও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। যদিও গোটা ঘটনার মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছেন না তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরী।
এই ব্যাপারে বিজেপির খড়গপুর শহর উত্তর মণ্ডল সভাপতি পরেশনাথ সিং ওরফে টিঙ্কু বললেন, “নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বিএলওদের দলীয় সভায় উপস্থিত করিয়ে একদম ঠিক করেননি তৃণমূল নেতা। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।” সিপিএমের খড়গপুর শহর পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক মধুসূদন রায়ের প্রতিক্রিয়া, “এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছি।” খড়গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের কথায়, “এভাবে দলীয় সভায় বিএলওদের ডাকা যায় না। যিনি এই কাজটি করেছেন ঠিক করেননি।”
তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক সুজয় হাজরার প্রতিক্রিয়া, “যে কাজটা করা যায় না, সেটা নিয়ে আর কী বলব? এভাবে দলের সভায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বিএলওদের পরিচিত করানো যায় না। যদি করাতেই হয় সেটা প্রশাসন করাবে। তাঁরা বুঝবেন।” অপরদিকে, খড়গপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সৌমেন দাস বলেন, “এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও অভিযোগ আসেনি। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তারপরে বলতে পারব।” তবে তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরী বললেন, “এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ নির্দেশ রয়েছে নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বিএলওদের সাহায্য করবে রাজনৈতিক দলগুলি। সেই কারনেই বিএলওদের ডাকা হয়েছিল পরিচয় করানোর জন্য।”
এদিকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৪ নম্বর বুথের বিএলও পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী অনিমা মুখোপাধ্যায় ভট্টাচার্য বললেন, “পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে ডেকেছিলেন। তাই গিয়েছিলাম। তবে বিষয়টি জানা ছিল না। ভুল হয়ে গিয়েছে। আর যাব না।” তবে এই বিএলও নিজেকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও আদতে এখন তিনি ডেবরা থানার বালিচকের বাসিন্দা। বুধবার ওই অনুষ্ঠানে আটজনের মধ্যে সাতজন বিএলও উপস্থিত ছিলেন। ৪১ নম্বর বুথের বিএলও উপস্থিত ছিলেন না। তবে সকলেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।