• বল্লভপুরে সিনেমা হল এ বার রূপকথা! মেদিনীপুরে বন্ধ হচ্ছে একমাত্র প্রেক্ষাগৃহও
    এই সময় | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’ বলে স্লোগান তোলা হয়। প্রচার হয় সমাজমাধ্যমে। ওইটুকুই সার? হল না থাকলে সিনেমা চলবে কোথায়? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। মেদিনীপুর শহরের সিনেমা জগতের শেষ পিদিম নিভিল অবশেষে! বন্ধ হলো বল্লভপুরের ‘হরি’ সিনেমা হল। স্মৃতিচারণায় ডুবলেন শহরবাসী।

    শুক্রবার থেকে বন্ধ হচ্ছে মেদিনীপুর শহরের হরি সিনেমা হল। গত কয়েক বছর ধরে এটিই ছিল শহরের একমাত্র সিনেমা হল। কারণ, শহরের অন্য দু’টি সিনেমা হল, ‘অরোরা’ ও ‘মহুয়া’ ২০০৮ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমাপ্রেমী শহরবাসীর হলে বসে সিনেমা দেখার একমাত্র ভরসা ছিল এই ‘হরি সিনেমা’। হলের মালিক নাওল কিশোর থারাড বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরে প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। কোভিডের সময় থেকেই ক্ষতি মাথায় নিয়েই হল চালিয়ে এসেছি। নতুন সিনেমা নিয়ে এলেও টাকা উঠছে না। কী করে চালাব? তাই হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।’

    উল্লেখ্য, বল্লভপুর এলাকায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ হরিচরণ সাউয়ের হাত ধরে ‘হরি সিনেমা’ হল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে এই হলটি লিজে নিয়ে চালাচ্ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা নাওল কিশোর থারাড। বর্তমানে এই হলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৮ জন কর্মী আছেন। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার নোটিস পাওয়ার পরে তাঁরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

    হলকর্মী সমীরকুমার দাস বলেন, ‘স্থায়ী কর্মীদের জন্য ৪ লক্ষ টাকা করে এবং অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি আমরা। না হলে আমরা আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’ ক্ষতি হবে হলের আশেপাশের ব্যবসায়ীদেরও। বাণেশ্বর দাস, তারকনাথ আঢ্য, রাজেশ দাস প্রমুখরা বলেন, ‘আমরা প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হব। এই এলাকাটা একেবারে খাঁ খাঁ করবে।’

    স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মেদিনীপুর শহরের সুপ্রতিষ্ঠিত কবি ও সিনেমা সমালোচক সিদ্ধার্থ সাঁতরা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখ ১৯৪৭ সালে কৃষ্ণলীলা ছবি দিয়ে শুরু হয় হরি সিনেমার পথ চলা। আমাদের কৈশোর আর যৌবনের অনেক স্মৃতিই জড়িয়ে আছে এই ‘হরি সিনেমা’কে ঘিরে। সেইসব দিনের কথা মনে করলে চোখে জল আসে বৈকি! শহরের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা শর্ট ফিল্ম নির্মাতা ইন্দ্রনীল দে বলেন, ‘মনে পড়ে মায়ের হাত ধরে প্রথম সিনেমা দেখতে এসেছিলাম এই হরি সিনেমা হলে। সিনেমাটি ছিল ফেলুদা সিরিজের ‘গোরস্থানে সাবধান’। পরে অনেক বাংলা, হিন্দি সিনেমা দেখেছি। সকলে মিলে সিনেমা দেখার সেই জায়গাটা শুক্রবার থেকে আর থাকবে না, ভাবতেই পারছিনা!’

    শহরের বল্লভপুরে হরি সিনেমা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মেদিনীপুর টাউন স্কুল। পড়ুয়ারাও এক সময়ে ভিড় জমাতেন হল চত্বরে। গল্প, আড্ডা, সিনেমা নিয়ে আলোচনা — গমগম করত ওই এলাকা। স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘মেদিনীপুর শহর থেকে একটা ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে! এ বড় বেদনার! প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব, যে ভাবেই হোক এই শহরে একটা সিনেমা হল গড়ে তোলা হোক।’

    মেদিনীপুরেরই সাংসদ জুন মালিয়া নিজেও অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘খবরটা শুনে আমিও খুব হতাশ হলাম! তবে অনেক আগে থেকেই আমি মেদিনীপুর শহরে একটি ভালো সিনেমা হল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিষয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথাও হয়েছে। আমি নিজেও নানা ভাবে চেষ্টা করছি, যাতে শহরে অন্তত একটি ভালো সিনেমা হল গড়ে তোলা যায়।’

  • Link to this news (এই সময়)