নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শেষ পর্যন্ত কার জেদ বজায় থাকল? নীতীশ কুমার? নাকি চিরাগ পাসোয়ান? দু’পক্ষেরই দাবি, আসন নিয়ে দর কষাকষিতে জয় হয়েছে তাদেরই। অন্য জোট শরিকদের কোটা থেকে একঝাঁক আসন নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন চিরাগ পাসোয়ান। কিন্তু নীতীশ-পন্থীদের দাবি, শেষ হাসি নীতীশ কুমারই হেসেছেন। কারণ এমন ১৪টি আসনে নীতীশ কুমার নিজের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, যেগুলি চিরাগকে দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছিল বিজেপি। ফলে বিজেপি কিছুটা ব্যাকফুটে গিয়ে চিরাগকে বাধ্য হয়েই নাকি অন্য ১৪টি আসন দিয়েছে। আর মোট ২৯ আসন পেয়ে নিজেকে জয়ী হিসেবে প্রতিভাত করলেও আদতে ক্ষুব্ধ চিরাগও। কারণ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিরাগকে যে আসনগুলি দেওয়া হয়েছে, সংখ্যার বিচারে তা ২৯ হলেও আদতে সেগুলি ‘দুর্বল’ আসন। অন্তত চিরাগের দলের পক্ষে ওই সমস্ত আসনে জেতা কঠিন। ফলে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে চিরাগ পাসোয়ানের পরবর্তী তালিকা নিয়ে। তিনি ১৪ জনের নাম ঘোষণা করেছেন। আরও ১৫ জনের তালিকা ঘোষণা বাকি। এনডিএ জোট শরিকদের অন্যরা ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে।
বিজেপির পর নীতীশ কুমারের দলের সর্বশেষ তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, ডাবল ইঞ্জিন সরকার বিহারের ভোল বদলে দিয়েছে, আরও উন্নয়নের জোয়ার আসবে বলে প্রচারে ঝড় তুলেছিল বিজেপি ও নীতীশ কুমারের দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের ভোটেও এই দুই দলের ‘পাখির চোখ’ জাতপাত। ভরসা অনগ্রসর। উভয় পক্ষই ১০১টি করে আসন পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মোট ২০২ আসনের মধ্যে অনগ্রসরই বেশি। বিজেপি ৪৯ জন উচ্চবর্ণের প্রার্থী দিয়েছে। ১৫ জন বানিয়া। উচ্চবর্ণের মধ্যে রাজপুত ২১, ভূমিহার ১৬, ব্রাহ্মণ ১১ এবং কায়স্থ ১। বিজেপির তালিকায় ওবিসির সংখ্যা ৩০। তার মধ্যে বৈশ্য ১৫, যাদব ৬, কুশওয়া ৭, কুর্মি ২। এক্সট্রিম ব্যাকওয়ার্ড (ইবিসি) ১০। তপশিলি জাতি ও উপজাতি ১২। বিজেপির ১৬ জন বিধায়ককে টিকিট দেওয়া হয়নি। মহিলা প্রার্থী ১৩।
পক্ষান্তরে সংযুক্ত জনতা দলের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিতভাবে অনেক বেশি অনগ্রসর। উচ্চবর্ণ সেই তুলনায় অনেক কম। ওবিসি প্রার্থী ৩৭। উচ্চবর্ণভুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা নীতীশ কুমারের দলে মোট ২২ জন। তার মধ্যে রাজপুত ১০, ব্রাহ্মণ ২, ভূমিহার ৯ এবং কায়স্থ ১। নীতীশ কুমারের ৩৭ জন ওবিসি প্রার্থীর মধ্যে তাঁর ভোটব্যাংকের লবকুশ কুর্মি-কুশওয়া সম্প্রদায়ের মোট ২৫ জন প্রার্থী। যাদব প্রার্থীর সংখ্যা ৮, কলবার ২। বিহারে এনডিএ জোটের চারজন মাত্র মুসলিম প্রার্থী। নীতীশকুমারের দল থেকেই টিকিট পেয়েছেন তাঁরা। বিগত ভোটে ১০ জন টিকিট পেয়েছিলেন। যাদব ও মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে বিজেপি জোটের। কারণ একটাই, এই ভোটব্যাংকের সিংহভাগ আরজেডির কাছে। গত নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রার্থীসংখ্যা কমানো হয়েছে। এদিকে, এনডিএতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও ভোটে জিতলে ফের নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি অমিত শাহ। ফলপ্রকাশের পর সব জোটসঙ্গী একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।