নয়াদিল্লি ও পাটনা: আগামী মাসের গোড়াতেই বিহারের বিধানসভা ভোট। এই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি তথা এনডিএর কাছে এখন কার্যত লিটমাস টেস্ট। মোদি সরকারের আমলে বেকারত্ব বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৫.২ শতাংশ মানুষই বেকার। গত মাসের থেকে ০.১ শতাংশ বেশি। পরিসংখ্যান এবং কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রকের (এমওএসপিআই) পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামীণ ভারতে। সেখানে আগস্টের তুলনায় বেকারত্ব বেড়েছে ০.৩ শতাংশ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিহারের ভোট অনেক কিছুরই উত্তর দেবে। দেশের অন্যতম গরিব এই রাজ্য থেকে কাজের খোঁজে দেশের অন্যত্র পাড়ি জমান বহু বাসিন্দা। দু’দশকের বেশি সময় বিহারের মসনদে থেকেও গরিব রাজ্যের তকমা ঘোচাতে পারেননি নীতীশ কুমার। তাই এবার বিহারে ভোটের অন্যতম বড় ইস্যু কর্মসংস্থান। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ঘোষণা করেছেন, বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সেই ঘোষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
হালফিলে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) নিয়ে সরগরম বিহারের রাজনীতি। নির্বাচনে যে তার প্রভাব পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এসআইআরের প্রভাব কার পক্ষে যাবে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে এবারের ফলাফল। বিরোধীদের মতে, শাসক জোটের সুবিধা করে দিতেই প্রায় ৬৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেছেন স্বয়ং রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক মহলের মতে, জনরোষের কারণে এসআইআর এবং কর্মসংস্থান—এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যাকফুটে শাসক এনডিএ। সেই অসন্তোষের ফলে ঝুলি ভরতেই পারে তেজস্বী-রাহুলদের।
সম্প্রতি ‘ভোট ভাইব’ নামে একটি এজেন্সি জানিয়েছে, খুব স্বস্তিতে নেই এনডিএ। ৮ অক্টোবর জনমত সমীক্ষা করা হয়েছিল। সংস্থার হিসেব, ইন্ডিয়া শিবিরের থেকে মাত্র ১.৬ শতাংশ বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। ‘ভোট ভাইব’ জানিয়েছে, এই অবস্থায় ফলাফল যে কোনও দিকে ঝুঁকতে পারে। তবে নীতীশ কুমার বা নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তায় ভর করে এনডিএ এগিয়ে রয়েছে, এমন নয়। ‘ভোট ভাইব’-এর মতে, রাজ্যের প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ মহিলাকে অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। সমীক্ষা চালানোর সময় বিহারের মহিলারা বিষয়টির উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন। আর সেই কারণেই জনমত সমীক্ষায় এগিয়ে এনডিএ। পাটনার সমাজকর্মী নিবেদিতা ঝা বলেন, এবারের ভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে চলেছেন মহিলারা। তিনি বলেন, ‘পুরুষরা এখানে থাকেন না। তাই মহিলারাই সব সিদ্ধান্ত নেবেন।’ আর এসআইআর নিয়ে অসন্তোষ কতটা, তা ধরা পড়েছে ৮৫ বছরের জিতনি দেবীর কথায়। তিনি বলেন, ‘আমাকে মৃত ঘোষণা করেছে। গ্রামের মানুষ আমাকে নিয়ে মশকরা করছে। ব্যাঙ্কে গেলে কর্মীরা ভূত দেখার মতো ভয় করছেন।’