গাড়ি পার্কিং নিয়ে বচসার জেরে খুন ইছাপুরের যুবক, ধৃত দু’জন
বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: বৃহস্পতিবার ইছাপুরের কণ্ঠাধারে রাস্তার একপাশে গাড়ি পার্ক করে উল্টোদিকের দোকানে কচুরি খেতে গিয়েছিলেন শেখ বাবাই, দিলীপ দাস সহ কয়েকজন। কিন্তু তাঁদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করায় তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন দুই ভাইবোন। গাড়ির পিছন দিকের লাইটের কাঁচ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ির গায়ে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতও করা হয়। তার প্রতিবাদ করেছিলেন দিলীপ দাস। কিন্তু তাতে এলোপাথাড়ি চড়-ঘুসিতে প্রাণ গেল তাঁর। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছেন নিহতের পরিবার ও পড়শিরা। এনিয়ে তাঁরা বিক্ষোভও দেখান। রাতে ম্যাটাডরে দিলীপবাবুর মৃতদেহ নিয়ে ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করেন তাঁরা। মহিলারা রাস্তার উপর বসে পড়েন। তাঁদের বিক্ষোভে ব্যস্ত ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনায় বিএন বসু হাসপাতালে মৃত্যু হয় দিলীপ দাসের (৩৯)। তাঁর ঘাড়ে ও মাথায় চোট লেগেছিল। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধা মা দুর্গা দাস। তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। ছোট্ট একচিলতে ভাড়াবাড়িতে ছেলে-বউমার সঙ্গে তিনি থাকেন। দুই মেয়ে রয়েছে দিলীপবাবুর। নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন দিলীপ। তদন্তে নেমে নোয়াপাড়া থানার পুলিশ দুই অভিযুক্ত সৌভিক রায় এবং তাঁর বোন পায়েল রায়কে গ্রেপ্তার করেছে। বারাকপুরের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস বলেন, এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মহিলারা চিৎকার করে বলছেন, চরম শাস্তি চাই। সৌভিক আবগারি দপ্তরে চাকরি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরই দপ্তরের সহকর্মীকে পেটানো এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ভাই-বোন দু’জনেই ঝগরুটে এবং মারকুটে হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। আগেও গাড়ি রাখা নিয়ে কখনও চিকিৎসক, কখনও এমনকী পুলিশের সঙ্গেও তর্কে জড়িয়েছিলেন সৌভিক ও তাঁর বোন।
ঘটনার পরে বাবাই বলেন, আমরা গাড়ি রেখে খাচ্ছিলাম। তাই ওঁদের দু’মিনিট অপেক্ষা করতে বলি। কিন্তু ওঁদের তর সয়নি। দুই ভাইবোন মিলে গাড়ির কাচ ভাঙেন এবং গাড়িতে ঘসা দিয়ে দাগ করে দেন। আমরা প্রতিবাদ করায় দিলীপকে মেরে ড্রেনে ফেলে দেন। পরে দিলীপকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওঁর মৃত্যু হয়।
এই খবর জানাজানি হতেই ইছাপুর কণ্ঠাধারে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। নিহতের পরিবার ও পড়শিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভ দেখান। সৌভিকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে নোয়াপাড়া থানার পুলিশ, ডি সি নর্থ গণেশ বিশ্বাস সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। অভিযুক্তদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান বাসিন্দারা। পরে পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত দিলীপের স্ত্রী রেখা বলেন, সামান্য কারণে ওরা স্বামীকে মেরে ফেলল। এখন দুই শিশুকে নিয়ে কীভাবে থাকব?