• বিস্ফারিত অক্ষিগোলক হয়ে উঠবে রক্তচক্ষু! মণ্ডপে ঢোকার আগে ভূতেরা আড্ডা জমিয়েছে কুমোরটুলির উড়েপাড়ায়
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আহা, বাহা, বাবা, ছানা, খোঁড়া, কানা—সত্যজিত্ রায়ের ‘ভূতের রাজা দিল বর’ গানের সমস্ত ভূত এখন কলকাতার উড়েপাড়ায় ভিড় জমিয়েছে। আপাতত তারা রাস্তাজুড়ে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে। মুখে রং করে কাপড় পরিয়ে ভূতেদের সাজিয়ে তুলেছে রক্তমাংসের মানুষ। কালীপুজো প্রাক্কালে কুমোরটুলি লাগোয়া উড়েপাড়ায় জমে ওঠে ভুতের আড্ডা। এখানে কিছুদিন নেত্য করে মাটির তৈরি ভূত ভয় দেখাতে চলে যায় কালীপুজোর মণ্ডপগুলিতে।

    উড়েপাড়ায় আপাতত ডাকিনি-যোগিনী তৈরির কাজ শুরু করেছেন বাড়ির বড় থেকে ছোট। মহিলারা হাতে তুলি নিয়ে ডাকিনি-যোগিনীর গায়ে রং চাপাচ্ছেন। এক শিল্পী বললেন, ‘আমরা সারাবছর গেঞ্জির কাজ করি। কালীপুজোর আগে ডাকিনি-যোগিনী তৈরি করি।’ দুর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন পুকুর থেকে বিসর্জন হয়ে যাওয়া ঠাকুরের কাঠামো তুলে আনা হয়। সেই কাঠামোতেই তৈরি হয় ডাকিনি-যোগিনী। কিন্তু ইদানীং ঠাকুর ভাসান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুলে নেওয়া হচ্ছে। ‘তাই আমাদের কিনতে হয়। আগে যেমন আমাদেরই লোকজন মাঝপুকুরে গিয়ে কাঠামো তুলে নিয়ে আসত। মাটির তৈরি ভূত এখন আর সেরকম বিষয় নেই’, বললেন এক ডাকিনি শিল্পী। এই এলাকার নাম উড়েপাড়া কেন? এখানে কি ওড়িয়াভাষীদের বাস? সেসব ইতিহাস কেউ বলতে পারে না। তাঁরা শুধু বলেন, ‘জানি না! এখন তো বাঙালিরাই থাকে।’ আর থাকে পালে পালে বিড়াল। প্রায় প্রতিটি ভূতের নীচে একটি করে বিড়াল বিশ্রাম নেয় ভর দুপুর কিংবা নিশুত রাতে। 

    ডাকিনিদের চোখে চোখ পড়লে চমকে উঠতে হয়। অমন বিস্ফারিত চক্ষু দেখে চমকে ওটার মুহূর্তেই কালো বিড়াল চলে যায় ডাক দিয়ে। চোখগুলো অমন কেন? তারপর মূর্তির পিছন দিকে ঘুরলে দেখা যায়, চোখের পিছন দিকে ঝুলছে দু’টি বিদ্যুতের তার। চোখ তো নয়, কুঠুরি দিয়ে উঁকি মারছে নাইট বাল্ব। বিদ্যুত্ সংযোগ হলেই লাল আলো জ্বলবে। ডেলিভারির আর বেশি সময় নেই। এখনই যতটা সম্ভব ভয়ানক করে তুলে মূর্তি পাঠাতে হবে মণ্ডপে। স্থানীয় এক শিল্পী বলেন, ‘আমরা প্রতিমা তৈরি করি, যতটা সম্ভব সুন্দর দেখানোর জন্য। কিন্তু এই ধরনের মূর্তি একেবারে উল্টো। এমনভাবে তৈরি করতে হবে মানুষ যাতে দেখেই ভয় পায়। এটা বানানো অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা।’
  • Link to this news (বর্তমান)