‘আমি বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা’, কুৎসা রুখতে পদক্ষেপ অভিষেকের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
কেবল রাজনৈতিক ময়দানে নয়, ‘বাংলা-বিরোধী বিজেপি’র মুখোমুখি হতে হবে নেট দুনিয়াতেও। তাই, ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরদস্তুর ডিজিটাল যুদ্ধেও নামতে তৎপর তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাভাবিকভাবে যুবসমাজকে নিয়ে শুরু করা তৃণমূলের এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবেন দলের যুবনেতা তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেমন হবে এই লড়াই? বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় সাংসদ জানিয়েছেন, বিজেপির লাগাতার বঞ্চনা ও কুৎসার জবাব দিতে ডিজিটাল যুদ্ধে নামছে দলের ডিজিটাল বাহিনী। তার নাম, ‘আমি বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা’।
অভিষেক বলেন, ‘এই ডিজিটাল যুগে এমন এক বাহিনীর প্রয়োজন যাঁরা নতুন সৃষ্টিতে বিশ্বাস করেন এবং স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। যাঁরা আমাদের মাতৃভূমির কৃষ্টি, সংস্কৃতি রক্ষার্থে লড়াই করতে সদা জাগ্রত এবং প্রস্তুত। যাঁরা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় বিশ্বাসী, তাঁরা এই বাহিনীতে যোগ দিন এবং একে তিলতিল করে গড়ে তুলুন।’ কেন যুব সমাজই অভিষেকের লক্ষ্য, তার কারণ জানিয়ে সাংসদ বলেছেন, ‘বাংলার গৌরব যাঁরা এই বিশ্ব দরবারের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে দিতে চান, তাঁদের জন্য এই বাহিনী। নতুন প্রজন্ম অনেক এগিয়ে, তাঁরা তীক্ষ্ণ, মিথ্যের বেড়াজাল চূর্ণ-বিচূর্ণ করে সত্যকে উপস্থাপিত করতে জানেন, প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখেন, কীভাবে ট্রেন্ড শুরু করতে হয় জানেন, তাই আপনারাই বাংলার আন্দোলনের মুখ।’
সংশ্লিষ্ট প্রচারাভিযানের লক্ষ্য বোঝাতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বাংলা-বিরোধী, বহিরাগত, জমিদার বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলার নামে মিথ্যাচার করছে, অপপ্রচার করছে। বিশ্ব দরবারে বাংলার সম্মান নষ্টের অপচেষ্টা চলছে। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে ঘৃণা ও কুৎসার রাজনীতি করছে। এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আমাদের লড়াই কেবল রাজনৈতিক ময়দানে কিংবা সংসদের কক্ষে নয়। ঢাল-তরোয়াল নিয়েও নয়। এই লড়াই মোবাইল স্ক্রিনে, নেট দুনিয়া, সমাজমাধ্যমে। তথ্য, যুক্তি, পরিসংখ্যান দিয়ে এবং বাংলার গৌরবকে পাথেয় করে আমাদের লড়তে হবে।’ তবে কীভাবে পরিচালিত হবে এই প্রচারাভিযান?
মূলত ৩টি বিভাগে ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’দের নিযুক্ত করে অংশগ্রহণ করানো হবে। প্রথম বিভাগ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর – ক্রিয়েটর ফোর্স। দ্বিতীয় বিভাগ, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার – কমিউনিটি লিডার এবং তৃতীয় বিভাগ, ডিজিটাল অ্যামপ্লিফায়ার- ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার। রেজিস্ট্রেশনের জন্য ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’রা নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে সাইন আপ করতে পারবেন। এরপর ৪ সপ্তাহব্যাপী অনলাইন ও অফলাইন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’দের গুণগত কাজের ভিত্তিতে পুরস্কৃতও করা হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলবে ১৬ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সাংগঠনিক রদবদল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে এই রদবদল পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজ্যের একাধিক পুরসভার দায়িত্বে বদল ঘটতে পারে। যাঁরা দলের সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেননি, তাঁদের চিহ্নিত করে দলের পদ থেকে সরানোর বিষয়ও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
এরইমধ্যে বিধানসভা ভোটের আগে দক্ষিণবঙ্গে ব্লক স্তরে একাধিক জেলায় বদল করা হয়েছে। হাওড়া শহর ও গ্রামীণ, হুগলি, শ্রীরামপুর, আরামবাগ, বিষ্ণুপুর, বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা এই বদলের আওতায় এসেছে। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি এখনও কার্যকর না হলেও পরবর্তী সময়ে এই নীতি চালু করার ভাবনা চলছে। এটি কার্যকর হলে কাউন্সিলর আর দলীয় সভাপতির পদে থাকতে পারবেন না। লোকসভার নিরীখে কলকাতার পুরসভার ৪৫টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রদবদল তৃণমূলের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।