আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার বিহারে এনডিএ জোটে ভাঙনের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে স্পষ্ট জানালেন—আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই লড়া হবে। শাহ বলেন, নির্বাচনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী পদে কে থাকবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে যৌথভাবে।
তিনি আরও বলেন, “নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, সেটা আমি নির্ধারণ করি না। আপাতত আমরা তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচনে যাচ্ছি। ভোটের ফল ঘোষণার পর সব মিত্রদল একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নেবে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।” শাহ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আরও যোগ করেন, “এনডিএ এবার বিহারে আগের সব রেকর্ড ভাঙবে। ১৪ নভেম্বর ফল ঘোষণার দিনই তা প্রমাণ হবে।”
অমিত শাহ জানান, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর নীতীশ কুমার নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন যে, যেহেতু বিজেপির আসন বেশি, তাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত বিজেপির কোনও নেতার। তবে শাহ বলেন, “আমরা সবসময় জোটের মর্যাদা রক্ষা করেছি। নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল তাঁর অভিজ্ঞতা, জনসম্মানের কারণে।”
নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক দলবদলের ইতিহাস নিয়ে বিরোধীদের মন্তব্যের জবাবে শাহ বলেন, “নীতীশজী কংগ্রেসের সঙ্গে মাত্র আড়াই বছর ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন কংগ্রেস-বিরোধিতার মধ্যে গড়ে উঠেছে—১৯৭৪ সালের জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্দোলন থেকেই, যা দেশজুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী জনআন্দোলনে পরিণত হয়েছিল এবং শেষমেশ জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পথ তৈরি করেছিল।”
বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে নীতীশ কুমারের স্বাস্থ্যের অবনতি ও অনিয়মিত আচরণের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শাহ বলেন, “আমি তাঁর সঙ্গে বহুবার মুখোমুখি ও ফোনে দীর্ঘ আলাপ করেছি। এমন কিছু কখনওই লক্ষ্য করিনি।” তিনি আরও যোগ করেন, “বয়সজনিত কারণে কিছু স্বাভাবিক সমস্যা হতে পারে, কিন্তু প্রশাসনের কাজ শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী একা করেন না—তাঁর দল ও মন্ত্রিসভা একসঙ্গে সব দায়িত্ব সামলান।”
অমিত শাহ বিহারের বিরোধী জোট, অর্থাৎ মহাগঠবন্ধন-এর কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, “বিহারের মানুষ লালু প্রসাদ যাদবের আমল দেখেছে। সেই শাসনের পুনরাবৃত্তি তারা কোনও অবস্থাতেই চায় না, যত সময়ই পেরিয়ে যাক না কেন।”
তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “কংগ্রেস সবসময় ছোট দলগুলিকে তুচ্ছভাবে দেখে। অন্যদের ছোট ভাবতে ভাবতে নিজেরাই ছোট হয়ে গেছে।” শাহের মতে, এই অহঙ্কারই কংগ্রেসকে রাজ্যগুলিতে শেকড়হীন করে তুলেছে, বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত কংগ্রেস তার জনভিত্তি হারিয়েছে।
শাহ বারবার জোর দিয়ে বলেন, “এনডিএ এককাট্টা ও ঐক্যবদ্ধ। নেতৃত্ব নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি নেই। জনতা মোদিজি ও নীতীশজির উন্নয়নের মডেলের ওপর আস্থা রাখে।” তিনি আরও দাবি করেন, বিহারে বিজেপি ও জেডিইউ-র সমন্বয় “আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে শক্তিশালী”, এবং নির্বাচনের ফলাফল তা স্পষ্ট করে দেবে।
অমিত শাহের এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বার্তা—নীতীশ কুমারই আপাতত এনডিএ-র মুখ, ভাঙনের জল্পনা ভিত্তিহীন। বিরোধীদের সমালোচনা ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্তিত্বহীনতা তুলে ধরে শাহের মন্তব্য বিহারের রাজনৈতিক আবহে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।