• ‘ইনফোসিসে কাজ করেন বলেই কি তারা সবজান্তা’, মূর্তি দম্পতিকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী...
    আজকাল | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া শুক্রবার ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা এন.আর. নারায়ণ মূর্তি ও লেখিকা-সমাজসেবী সুধা মূর্তির সমীক্ষা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই সমীক্ষা “পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য নয়, এটি গোটা জনসংখ্যার সমাজ-শিক্ষা সমীক্ষা।”

    সিদ্দারামাইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “ওটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা ২০ বার বলেছি এটি কোনও ‘ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস সার্ভে’ নয়। এটি রাজ্যের সম্পূর্ণ জনগণনার অংশ। যদি তারা তা না বোঝেন, আমি কী করতে পারি? ইনফোসিসে কাজ করেন বলেই কি তারা সবজান্তা?” কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তিনি আরও বলেন, “আমরা বহুবার পরিষ্কার করেছি। তবুও যদি সুধা ও নারায়ণ মূর্তি মনে করেন এটি পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সমীক্ষা, তবে তা ভুল ধারণা। কেন্দ্র সরকারও এমনই সমীক্ষা করছে — সেটার প্রতিও কি তারা আপত্তি জানাবেন?”

    সূত্র অনুযায়ী, কর্ণাটক অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের উদ্যোগে চলা এই সমাজ-শিক্ষা সমীক্ষার সময় সমীক্ষকরা যখন মূর্তি দম্পতির বাসভবনে পৌঁছান, তখন তারা বলেন, “আমরা চাই না আমাদের বাড়িতে এই সমীক্ষা হোক।” দু’জনেই জানান যে তারা কোনও অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্গত নন, তাই এই সরকারি সমীক্ষা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। সুধা মূর্তি সমীক্ষা ফর্মে একটি লিখিত ও স্বাক্ষরিত বিবৃতি দেন — যেখানে উল্লেখ থাকে যে এই সমীক্ষা তাদের ক্ষেত্রে সরকারের কোনও কাজে লাগবে না। 

    এই ঘটনায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি. কে. শিবকুমার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা কাউকে জোর করছি না। এই সমীক্ষা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী। অংশগ্রহণ করা বা না করা নাগরিকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।” অন্যদিকে, ইনফোসিসের প্রাক্তন সিইও মোহনদাস পাই এই সমীক্ষার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “কর্ণাটকের মন্ত্রীরা এখন উন্নয়ন, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান নিয়ে নয়— বরং জাতপাত, তোষণনীতি আর সমীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত। তারা রাজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছেন, উন্নয়নের বদলে ‘ফ্রিবি’-র জন্য ঋণ নিচ্ছেন।”

    এই বিতর্কের মধ্যে কর্ণাটক হাইকোর্ট তার অন্তর্বর্তী আদেশে জানিয়েছে, রাজ্য সরকারকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে যে এই সমাজ-অর্থনৈতিক ও শিক্ষা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। আদালত আরও নির্দেশ দেয় যে, সমীক্ষকরা কারও কাছ থেকে জোর করে তথ্য নিতে পারবেন না, এবং সংগৃহীত সমস্ত তথ্য গোপন রাখা হবে। শুধুমাত্র অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনই তা পর্যালোচনা করতে পারবে। বিচারপতি পর্যবেক্ষণ করেন, “এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ। এতে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের কোনও লঙ্ঘন হয় না।”

    উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের এই সমাজ-শিক্ষা সমীক্ষা মূলত জনসংখ্যা, শিক্ষার মান, পেশা ও আর্থিক অবস্থার সামগ্রিক পর্যালোচনার জন্য করা হচ্ছে। তবে বিরোধীরা দাবি করছে, এটি গোপনে একটি ‘জাতভিত্তিক জনগণনা’, যা রাজ্যকে বিভাজনের পথে নিয়ে যেতে পারে। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও তার মন্ত্রিসভা স্পষ্ট জানিয়েছেন সমীক্ষার উদ্দেশ্য হল সমাজের প্রকৃত বাস্তবচিত্র তুলে ধরা, যাতে উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি সুবিধা আরও লক্ষ্যভিত্তিকভাবে বিতরণ করা যায়। মূর্তি দম্পতির সমীক্ষা থেকে নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এখন কর্ণাটকের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা — “এই সমীক্ষা কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং সবার জন্য।”
  • Link to this news (আজকাল)