পদ্মের নতুন রাজ্য কমিটিতে কারা ফিরছেন? কাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি? দুই প্রাক্তন সভাপতির নজর কমিটিতে
আনন্দবাজার | ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সাড়ে তিন মাস আগে তিনি রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসেছেন। সপ্তাহ দুয়েক ছিল ‘মধুচন্দ্রিমা’ কাল। তার পর থেকেই বিজেপির ভিতরে-বাইরে নানা প্রশ্ন নতুন রাজ্য কমিটির চেহারা নিয়ে। কারা থাকছেন, কারা বাদ পড়ছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের ভবিষ্যৎ কী? আদি নেতা সভাপতি হওয়ায় আদি বিজেপির গুরুত্ব বাড়তে চলেছে কি? রাজ্য দফতরের বাইরে ছোট ছোট জটলায় এমন নানা তথ্যের খোঁজ চলছে। আর দফতরের ভিতরে চলছে দুই প্রাক্তন সভাপতির জমানার তালিকার খোঁজ। সেই দুই তালিকা থেকে বেশ কিছু নাম বর্তমান সভাপতির কমিটিতে ঠাঁই পেতে চলেছে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর।
নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের পূর্বসূরি সুকান্ত মজুমদার সক্রিয় ভাবে বিজেপিতে নাম লেখানোর আড়াই বছরের মধ্যেই দলের রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন। সুকান্তের পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে সেই সময়কাল ছিল আরও সংক্ষিপ্ত। আরএসএস থেকে বিজেপিতে পদার্পণের পরে বছরখানেক কাটার আগেই তিনি দলের রাজ্য সভাপতি হয়ে যান। দিলীপ-সুকান্তের সভাপতিত্বের সম্মিলিত মেয়াদ ১০ বছর। অর্থাৎ, ১০ বছর পর আবার এমন কোনও নেতা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি হয়েছেন, যিনি দলে আদি। সে কারণেই দলে পুরনোদের ‘কদর’ বৃদ্ধির জল্পনা নানা ভাবে পল্লবিত হয়েছে।
নতুন রাজ্য কমিটিতে কারা থাকবেন, তার অনেকটাই চূড়ান্ত বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু কমিটির পদাধিকারী বা সদস্য বাছাই প্রক্রিয়ায় সভাপতি কোনও নির্দিষ্ট অংশের কদর বাড়ানো বা কমানোর নীতি নেননি বলেই দাবি। পূর্ণাঙ্গ রাজ্য কমিটিতে ২২০-২২৫ জন সদস্য থাকতে পারেন। এই সংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশকেই বিদায়ী অর্থাৎ সুকান্তের কমিটি থেকে নেওয়া হবে। বাকি ৩৫ শতাংশকে বেছে নেওয়া হবে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নানা বিন্যাসের ভিত্তিতে। সে ক্ষেত্রে পুরনোরা অগ্রাধিকার পাবেন। দলীয় বৃত্তে ‘কাজের লোক’ হিসাবে পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে গুরুত্ব পাননি, এমন কিছু নেতা আলোকবৃত্তে ফিরবেন।
সর্বাগ্রে আলোচনায় এসেছে দল থেকে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ এক পুরনো নেতার নাম, যিনি এক সময়ে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তাঁর শাস্তি প্রত্যাহার করানো শমীকের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। এ ছাড়া রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহ, অমিতাভ রায়দের গুরুত্বও শমীকের কমিটিতে বাড়তে চলেছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
নতুন কমিটিতে কোন পুরনোরা ফিরতে পারেন, তা নির্ধারণ করতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রাহুল সিংহ জমানার কমিটি। অর্থাৎ, ১০ বছর আগের কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের থেকে বেশ কিছু নাম বেছে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার চেয়ে পিছনে আর যেতে চাইছেন না শমীক। কারণ, সে সময়ের নেতারা বয়সজনিত কারণে আর আগের মতো কর্মক্ষম নেই। কর্মক্ষম অথচ পুরনো বিজেপি, এই দু’য়ের সমাহার খুঁজে পেতে হলে রাহুল জমানার কমিটিই আদর্শ। দিলীপের কমিটিতে কারা ছিলেন, সে তালিকাও খুঁজে বার করে চোখ বোলানো হচ্ছে।
বর্তমানে রাজ্য বিজেপিতে যে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন নতুন কমিটিতেও একই দায়িত্বে থেকে যেতে পারেন। সংখ্যাটি তিনও হতে পারে। অন্তত দু’জন সাধারণ সম্পাদক এ বার সহ-সভাপতি পদ পেতে পারেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কারা লড়বেন, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই ওই স্তরে রদবদলের কথা ভাবা হয়েছে। যাঁদের ভোটে লড়তে হবে, তাঁদের সাংগঠনিক গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিতেই এই ভাবনা।
গোটা প্রক্রিয়া খুব সহজ-সরল ভাবে এগোচ্ছে, এমন নয়। রাজ্য কমিটি সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে শুধু নতুন-পুরনোর ভারসাম্য দেখা হচ্ছে না। আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্যের কথাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। পদাধিকারী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল এবং সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিএল সন্তোষের বিভিন্ন পছন্দকেও গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মধ্যেও ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে। সর্বোপরি আরএসএস। কমিটি ঘোষণার আগে কেশব ভবনের (আরএসএসের স্থানীয় সদর দফতর) অদৃশ্য অনুমোদন নেওয়া বঙ্গ বিজেপি-তে প্রায় অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। শমীকের মতো সঙ্ঘের ‘ঘরের লোক’ সভাপতি হওয়ায় সেই অনুমোদন এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। এই সমস্ত দিক সামলে কমিটি কবে ঘোষিত হবে, সে বিষয়ে অবশ্য রাজ্য বিজেপি-তে কেউ নিশ্চিত নন।