• প্রকাশ্যে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা! হাতুড়ের ‘চিকিৎসায়’ মৃত ২ শিশু...
    আজকাল | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিষাক্ত কাফ সিরাপ নিয়ে বিতর্ক থামতে না থামতেই ফের প্রকাশ্যে চলে এল মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই রাজ্যে বহুদিন ধরেই হাতুড়ে চিকিৎসকদের রমরমা। এবার তেমনই দুই হাতুড়ের দৌরাত্ম্যে দু’টি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল এই রাজ্যে। ছতরপুর এবং খান্ডোয়া জেলায় পৃথক দুই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে শিশুদুটি। পরিবারের অভিযোগ, হাতুড়ের গাফিলতি এবং ভুল চিকিৎসার কারণেই এই পরিণতি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে হয়তো বাঁচানো যেত দু’টি তরতাজা প্রাণ।

    ছতরপুরের ঘটনায় ২০ দিনের এক সদ্যোজাতকে ভুল ওষুধ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, ওই ওষুধ খাওয়ার পরেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। মায়ের কোলেই নিথর হয়ে যায় সে। সন্তানের মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারান মা।

    শিশুটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে তার কাকা মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, “ওর শ্বাস চলছিল না। আমি ওকে বাঁচানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ওর শরীরে কোনও সাড় ছিল না।”

    পরিবারের তরফে ওই ভুয়ো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ জানাবেন বলেও জানিয়েছেন পরিবারের লোকেরা। জানা গিয়েছে, মানসিক আঘাতে শিশুটির মায়ের অবস্থাও সঙ্কটজনক।

    ছতরপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাজেন্দ্র গুপ্ত জানিয়েছেন, জেলায় কতজন ভুয়ো চিকিৎসক আছেন, কতজন অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা চালাচ্ছেন, সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গাফিলতির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

    অন্য ঘটনাটি খান্ডোয়া জেলার গাঁধওয়া গ্রামের। সেখানে দেড় বছরের এক বালককে পর পর বেশ কয়েকটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আর এক ভুয়ো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীদের দাবি, অভিযুক্ত যুবক ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন আগেই একটি ছোট দোকানে ডাক্তারখানা খুলে বসেন তিনি।

    আত্মীয়ের পরামর্শে সামান্য জ্বর ও পেটে ব্যথার জন্য ছেলেকে হিমাংশু যাদব (২৪) নামের ওই যুবকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। অভিযোগ, কোনও রকম রোগ নির্ণয় ছাড়াই হিমাংশু শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেন এবং চিকিৎসা শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটিকে স্যালাইনের পাশাপাশি পাঁচটি কড়া ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এর পরেই শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আতঙ্কিত পরিবার হিমাংশুর সাহায্য চাইতে গেলে তিনি বেপাত্তা হয়ে যান। অভিযোগ, সেই সময় হিমাংশুর স্ত্রী তাঁদের বলেন, “ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যান, নইলে পুলিশ ডাকব।” এই নিয়ে অভিযুক্তের পরিবারের সঙ্গে মৃত শিশুর বাবা-মায়ের বচসা এবং হট্টগোল শুরু হয়। এর পর তড়িঘড়ি শিশুটিকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের আরও অভিযোগ, তাঁরা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। শেষে পিপলোদ থানায় গিয়ে মামলা রুজু করে মৃত শিশুর পরিবার।

    স্থানীয় আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত হিমাংশুর বাবা একটি সরকারি চিকিৎসালয়ে কর্মরত। কোনও রকম অনুমোদন ছাড়াই ওই চিকিৎসালয়টি খোলা হয়েছিল। গ্রামবাসীরা আরও জানান, এর আগেও ওই হাতুড়ের ভুল চিকিৎসায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। খান্ডোয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক কাশী রাম বরদোলে বলেন, “অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তদন্তের জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে। জেলায় যত বেআইনি হাতুড়ে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
  • Link to this news (আজকাল)