কালীপুজোর মুখেই কলকাতায় নাম্বার প্লেট জালিয়াতির বড় চক্র ফাঁস, পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার ৮...
আজকাল | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কালীপুজোর আগে শহর কলকাতায় পুলিশের তৎপরতায় সামনে এল গাড়ির নাম্বার প্লেট জালিয়াতির এক বড়সড় চক্র। কলকাতা পুলিশের বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট আটজন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনায় কসবা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং গোটা চক্রের সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েকজনের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কসবা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সৌভিক বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কসবা থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট ডি.পি.এস জুনিয়র রুবি পার্কের কাছে একটি স্কুটি আটক করেন। যাচাই করে দেখা যায়, স্কুটিটির নাম্বার প্লেটটি সম্পূর্ণ জাল এবং এটি অন্য এক ব্যক্তির নামে রেজিস্টার করা।
তদন্তে আরও জানা যায়, এর আগেই ১০ অক্টোবর রঞ্জন দত্ত নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান যে, তাঁর স্কুটির নাম্বারে একাধিক প্রসিকিউশন মেসেজ আসছে, অথচ তিনি সেই জায়গাগুলিতে কখনও যাননি। এতে স্পষ্ট হয়, কেউ তাঁর নাম্বার নকল করে জাল প্লেট ব্যবহার করছে।
পুলিশ স্কুটি ও চালককে কসবা থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে মঙ্গল নস্কর নামে ওই চালক স্বীকার করেন, আগস্ট মাসে পরমেন্দ্র প্রসাদ কেশরি নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি স্কুটি কিনেছিলেন।
কিন্তু সেটি নষ্ট হয়ে গেলে কেশরি তাঁকে একটি ‘ভুয়ো নাম্বার প্লেট-যুক্ত’ স্কুটি ব্যবহার করতে বলেন। এরপরই পুলিশ মঙ্গল নস্করকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলের জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ পরমেন্দ্র প্রসাদ কেশরিকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে।
কেশরি স্বীকার করেন, তিনিই মঙ্গল নস্কর নামে ওই ব্যক্তিকে ওই ভুয়ো নাম্বার প্লেটযুক্ত স্কুটি দিয়েছিলেন। এরপর কেশরির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিক্রম সাউ নামে এক ব্যক্তিকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। তাঁর দোকান থেকে একাধিক জাল নাম্বার প্লেট উদ্ধার হয়।
বিক্রম সাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য সামনে আসে তা রীতিমত চমকে যান তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদে বিক্রম জানান, ১৩ নম্বর ম্যাকলিয়ড স্ট্রিটের একটি ঘরে রয়েছে নাম্বার প্লেট তৈরির মেশিন এবং পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যের ভুয়ো নাম্বার প্লেটের ভাণ্ডার।
অভিযানে গিয়ে পুলিশ দেখে, কোনও বৈধ নথি ছাড়াই সেখানে বাণিজ্যিকভাবে জাল নাম্বার প্লেট তৈরি হচ্ছিল। অবশেষে ওই জায়গা থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ নিয়াজউদ্দিন (২৮), মীর সাহেনুল আখতার (৪৮), মীর ফারুক আলি (৫৫), সামির আলি (২২) এবং সলমন খান (২৫)।
লালবাজার সূত্রে খবর, মোট আটজন মিলে এই জালিয়াতি চক্রটি পরিচালনা করত। পুরো শহরে ছড়িয়ে থাকা স্কুটি ও গাড়ির নম্বর নকল করে তারা নতুন নাম্বার প্লেট তৈরি করে বিক্রি করত। নাম্বার প্লেট তৈরির মেশিন, বিভিন্ন রাজ্যের জাল নম্বর প্লেট, কাঁচামাল ও সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সমস্ত অভিযুক্তদের শুক্রবার আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই চক্রের পেছনে আরও বড় মাথারা জড়িত থাকতে পারে এবং সেই দিকেই নজর দিচ্ছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল।