• ভাঙড়ে গিয়ে আইএসএফকে আহ্বান সুজনের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • বছর ঘুরতেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। মসনদের দখলের লড়াইয়ের আগে শাসক থেকে বিরোধী প্রত্যেকে ব্যস্ত নিজের ঘর গোছাতে। বিজেপি ও তৃণমূল ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে সংগঠন শক্ত করতে। কিন্তু বাম শিবিরে এখনও জোট নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। বিশেষ করে আইএসএফ-কে জোটে নিয়ে লড়াই হবে কি না, সেই নিয়েই চলছে তীব্র মতবিরোধ ও গুঞ্জন।

    এই আবহে ভাঙড়ের মাটিতে গিয়ে ফের জোটের ডাক দিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সকলকে একজোট করানো আমাদের আগ্রহ। বিজেপি-তৃণমূলের বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু কংগ্রেস ও আইএসএফের সিদ্ধান্ত ওঁরা নিজেরাই নেবেন। আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

    তবে সুজনের সেই আহ্বানে সাড়া দেননি আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। বরং পাল্টা মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘জোটের জন্য আমরা আগেই বিমান বসুকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর পাইনি। সুজনবাবু যদি জোট চান, আগে বিমান বসুকে বলুন যেন জবাব দেন।’

    প্রসঙ্গত, গত আগস্টেই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি লিখে আইএসএফ নেতা নওশাদ জোটের উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘দুর্গাপুজোর পরে আলোচনা হবে’ বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিমান বসু। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও বার্তা বা আলোচনার ডাক পাননি তিনি। ফলে আইএসএফ শিবিরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা।

    নওশাদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০২১ সালে ব্রিগেডের সভায় বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ একসঙ্গে ‘সংযুক্ত মোর্চা’র পতাকা তুলেছিল। তখন রাজ্য রাজনীতিতে আশার আলো দেখেছিল বিরোধী ভোটের একাংশ। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় সেই জোট কার্যত ভেঙে যায়। মুর্শিদাবাদে একই আসনে বাম ও আইএসএফ— দুই দলের প্রার্থী ঘোষণার পরই সংঘাত দেখা দেয়। তারপর থেকেই নওশাদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘আমরা একা লড়ব।’

    লোকসভা ভোটে একক লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে আইএসএফ নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করতে সক্ষম হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সেই সিদ্ধান্তে বামেদের ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, বিধানসভা ভোটের আগে কি পুরনো জোটের পুনর্জন্ম হবে?

    বাম শিবিরের একাংশের দাবি, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছোট দলগুলিকে একত্র না করলে বামেরা মাঠে পিছিয়ে পড়বে। অন্যদিকে, আরেক অংশ মনে করছে, আইএসএফের সঙ্গে জোট মানে সংখ্যালঘু ভোটের নির্দিষ্ট ঘেরাটোপে আটকে পড়া, যা বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের পক্ষে বিপদজনক হতে পারে।

    সব মিলিয়ে, বাম রাজনীতিতে এখন ‘জোট না একলা চলো’— সেই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ভাঙড়ের সভা থেকে সুজন চক্রবর্তীর বার্তা যতটা স্পষ্ট, ততটাই কূটনৈতিক নওশাদের উত্তর। ফলে রাজ্যের বাম রাজনীতি আবারও দাঁড়িয়ে আছে এক অনিশ্চয়তার মোড়কে।

    রাজনীতির মাঠে এখন সব নজর একটাই— বিমান বসুর উত্তর কী আসে, সেদিকে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)